ভাড়া বাড়বে যমুনা রেলসেতু দিয়ে চলা ট্রেনের: সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭:০৩
-67d95358d7808.jpg)
মঙ্গলবার উদ্বোধন হয় দেশের দীর্ঘতত যমুনা রেলসেতু
যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘ রেলসেতুতে চলাচলকারী যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া দিতে হবে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে যমুনা রেলওয়ে সেতু পশ্চিমের সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
রেল সচিব বলেন, “আগে যমুনা সেতুর রেললাইন দিয়ে পণ্যবাহী ভারী ট্রেন চলাচল করতে পারত না। কিন্তু এখন এই রেল সেতু দিয়ে তা করতে পারবে। এ সময় নিয়মানুযায়ী ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ট্রেনে চলাচল করা যাত্রীদের সেবা বাড়ানো হয়েছে।”
সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেন, “আগে যেটা ছিল ১৬ সামথিং প্রায় এখন এটি ২৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। কাজেই এরজন্য আমাদের যাত্রীদের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। আমি এক্সাম্পল হিসেবে বলতে পারি ঢাকা থেকে রাজশাহী যে ট্রেনটিতে শোভন শ্রেণিতে ৪০৫ টাকা ভাড়া ছিল সেটি এখন ৪৫০ টাকা হবে।
কাজেই সুবিধাটার দাম হিসেবে কিছু ভাড়া যাত্রীদের বৃদ্ধি পাবে।”
মঙ্গলবার দেশের দীর্ঘতম এই রেলসেতুর উদ্বোধন করা হয়।
এর ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রেল চলাচলে নতুন দিগন্ত খুলে গেল। উন্মোচিত হলো যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত।
সেতুটি উদ্বোধনের ফলে সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যেই যমুনা পাড়ি দিতে পারবে ট্রেন। ডবল লেনের হলেও প্রথমে সিঙ্গেল ট্র্যাক চালু হলো। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডাবল ট্র্যাক রেল লাইন তৈরি করা হবে।
উদ্বোধনের পর ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জ পশ্চিম প্রান্তে সয়দাবাদ রেল স্টেশন পর্যন্ত অতিথি ও সংশ্লিষ্টরা রেল সেতুটি পার হন। এরপর সায়দাবাদ রেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন হয়। পরে ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন পূর্ব প্রান্তে ফেরত আসে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে দুই বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়ন এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণকাজ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু’টির নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেল সেতু’ নামকরণ করা হয়।
আগে যমুনা সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করলেও নতুন সেতু দিয়ে ৬৮টি ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪ দশমিক আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজ সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে।