
ডিএমপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার পুলিশ কমিশনার রোজার মাস ও ঈদে রাজধানীর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ‘অক্সিলারি ফোর্স’ নিয়োগের কথা বলার পর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চললেও বিষয়টি চূড়ান্ত করা যায়নি।
প্রাথমিকভাবে
চার শতাধিক বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীর তালিকা হয়েছে, যদিও তারা কবে থেকে কাজ শুরু করবে,
এই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
এই সদস্যদের
নিয়োগ, মেয়াদ, কর্ম পদ্ধতি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালাও করা হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে,
নিজেদের দায়িত্বের বাইরে পুলিশকে সহায়তা করলেও তাদেরকে কোনো আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে
না।
বাহিনীটির কর্মকর্তাদের
ভাষ্য, এই ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ বাড়তি কোনো দায়িত্ব পালন করবে না, তাই
তাদেরকে বাড়তি অর্থ দেওয়ার ‘প্রয়োজন নেই।’
ডিএমপি বলছে,
বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক স্থাপনায় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তারা সেখানেই
দায়িত্ব পালন করবে।
ডিএমপির গণমাধ্যম
ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার ((ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন,
“তাদের কোনো সম্মানির ব্যবস্থা নাই, সম্পূর্ণ অবৈতনিক।”
গত ৮ মার্চ
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী অক্সিলারি ফোর্সের ধারণা দিয়ে বলেন, “রমজান ও ঈদ
উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর মার্কেট, শপিংমলগুলো খোলা থাকে। পুলিশ স্বল্পতায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে
রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, শপিংমল ও মার্কেটে অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দেওয়া হবে।
তাদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতাও থাকবে।”
এই বক্তব্য
দেওয়ার ৯ দিন পর গত সোমবার ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার ((ডিসি)
মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘’প্রাথমিকভাবে ৪২৬ জনের নাম চূড়ান্ত
করেছি। বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক স্থাপনা এই সব জায়গায় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে
রয়েছেন তাদের মধ্যে থেকেই যাচাই-বাছাই করে এই নামগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে।
“তারা খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবেন। তবে এখনো তারিখ নির্ধারণ
করা হয়নি।”
রোজা শেষ হতে
চলার বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘’রোজার বাকি সময় এবং সামনে ঈদ এবং
আছে সেই উপলক্ষে শুরু করতে যাচ্ছি। এখন দেখা যাক বিষয়টা কেমন হয়, সেই হিসেব করে পরবর্তী
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তাদের দায়িত্ব
ঠিক কেমন হবে, এমন প্রশ্নে তালেবুর বলেন, ‘’তারা পুলিশের সহযোগী হিসেবে থাকবে। যেমন
যে গুলশান এলাকার কোম্পানিতে চাকরি করে, সে অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে তার মতো ডিউটি করবে।”
ডিএমপির সিদ্ধান্ত হলো, গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাওয়া বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী ও অন্যদের মধ্যে পোশাকে কোনো পার্থক্য থাকবে না। তাদেরকে কোনো অস্ত্রও দেওয়া হবে না। কেবল একটা আর্ম ব্যান্ড পরবেন।
অনেক প্রশ্নের
জবাব নেই
আইনশৃঙ্খলার
অবনতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে পুলিশের এই ‘অক্সিলারি ফোর্স’
এর ধারণা বাড়তি জটিলতা তৈরি করে কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে ।
পুলিশ বলছে,
এই ফোর্সের সদস্যদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে
থাকা কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না, এমন নিশ্চয়তা কীভাবে পাবে কর্তৃপক্ষ, সেই প্রশ্নের
কোনো যুতসই জবাব মেলেনি এখনও।
সম্প্রতি একজন
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের পর জানা গেছে, রাজধানীর শ্যামলী এলাকায়
সেই ছিনতাইকারী দলের নেতৃত্বে আছেন একজন বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী, যিনি দিনের বেলায়
ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করেন।
আবার গ্রেপ্তার
বা পুলিশের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কেউ হামলায় কেউ আহত হলে বা কর্মহীন হয়ে পড়লে তার
চাকরির নিশ্চয়তা কী হবে, এ নিয়েও প্রশ্নের জবাব নেই।
বেসরকারি নিরাপত্তা
কর্মীদেরকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করানোর এই ধারণাটি বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা
ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক।
দেশকাল নিউজ
ডটকমকে তিনি বলেন, ‘’গ্রেপ্তারের বদলে আটক হলে বর্তমান বাস্তবতায় যথাযথ ছিল। যাকে তাকে
গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিলে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়।”
এই সদস্যদের
জন্যও এই ক্ষমতা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করতে পারে বলে মত দিয়েছেন এই শিক্ষক। উদাহরণ টেনে
তিনি বলেন, “তারা কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করল। আসামি জামিনে বের হয়ে অক্সিলারি ফোর্সের
ওই ব্যক্তিকে হামলার করল এবং হামলার ফলে তিনি যদি কর্মহীন হয়ে পড়লেন। তখন তার উপার্জনের
নিশ্চয়তা কি পুলিশ দেবে?’’
অক্সিলারি ফোর্সের
সদস্যদের ভেতরে অপরাধ প্রবণতা কাজ করবে না- এই নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না তৌহিদুল।
‘’ব্যক্তিগত শত্রুতা বা পূর্ব শত্রুতায়
এরা যে নির্দোষ কাউকে কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত করে সেখান থেকে সুযোগ সুবিধা বা ভিন্ন
পরিস্থিতি তৈরি করবে না এই নিশ্চয়তা আমি কীভাবে পাচ্ছি?’’, প্রশ্ন এই শিক্ষকের।
এর আগে কমিউনিটি
পুলিশিং, বিট পুলিশিংও সফলতার মুখ দেখেনি। যাদেরকে সম্পৃক্ত করেছে, তারা সুযোগ নিয়েছে
বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, “কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, অভিযুক্তকে মুক্ত করে দিয়েছে,
নির্দোষ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। অক্সিলারি ফোর্সের মধ্যেও এই অভিযোগ তৈরি হবে, সুযোগ
নেওয়ার চেষ্টা করবে।”
বেতন ও প্রশিক্ষণ ছাড়া স্বেচ্ছাশ্রম কদিন দেবেন এই প্রশ্ন রেখে তৌহিদুল বলেন, “কেন সে আলাদা করে দিনের পর দিন সময় দেবে?”