অভিনব প্রতারণার ফাঁদ: ‘ম্যাগনেটিক কয়েন’ প্রতারক চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৬

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সংবাদ সম্মেলন
বিপুল পরিমান অর্থ উদ্ধারসহ অভিনব কৌশলে প্রতারণাকারী ‘ম্যাগনেটিক কয়েন’ প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির আদাবর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা
হলেন ইফতেখার আহম্মেদ, আবু নাঈম মো. ফাইজানুল হক ওরফে ডক্টর নাঈম, মোঃ আব্দুল হালিম
তালুকদার কুরাইশি ও আবুল কালাম আজাদ।
বৃহস্পতিবার
মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আদাবর থানা এলাকার প্রিন্স বাজার, শেখেরটেক, সূচনা
কমিউনিটি সেন্টার ও কৃষি মার্কেট সহ অন্যান্য এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার
করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত হতে চারটি ‘এন্টিক
মেটাল কয়েন’ (ধাতব মুদ্রা), একটি ৫০ লক্ষ টাকার ব্যাংক চেক, নগদ ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ
সূত্রে জানা যায়, আট মাস পূর্বে জনৈক মিজানুর রহমানের ভাড়াটিয়ার মেয়ে মিজানুর রহমানের
বনানীস্থ অফিসে আসামি ইফতেখার আহম্মেদের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেন।
সেখানে
ইফতেখার মিজানুর রহমানকে ‘এন্টিক মেটাল কয়েন’ (ধাতব মুদ্রা) নামক ব্যবসা সম্পর্ক বিস্তারিত
বর্ণনা করে প্রলোভন দেখিয়ে কয়েন ক্রয় করতে বলেন। ইফতেখার আহম্মেদ তাকে বলে এই ব্যবসা
সম্পর্কে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে।
সে আরো
বলে, জাপান এবং ইউএসএ এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই কয়েনের প্রচুর চাহিদা আছে। তারা অতি
উচ্চমূল্যে কয়েনগুলো উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহে বিক্রয় করে দিতে পারবে বলে জানায়। এ সকল
প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে ইফতেখার আহম্মেদ এবং বিদেশি
কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে আবু নাঈম মো. ফাইজানুল হক ওরফে ডক্টর নাঈম এবং মো. আব্দুল
হালিম তালুকদার কুরাইশি মিজানুর রহমানকে ডেকে নেয়।
তারা
ধাতব কয়েনগুলোর প্রতিটির বাজার মূল্য আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার হবে বলে তাকে ধারণা
দেয়। তারা তাদের নিজস্ব ভুয়া কেমিস্ট মো. আব্দুল হালিম তালুকদার কুরাইশি এর মাধ্যমে
এন্টিক মেটাল কয়েনগুলোর সঠিকতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাদীকে একটি রিপোর্ট প্রদান করে।
এরই ধারাবাহিকতায়
গত ২৭ অক্টোবর জাপান গার্ডেন সিটির নিকটস্থ একটি ভবনে মিজানুর রহমান তাদের নিকট এন্টিক মেটাল কয়েন ক্রয়ের জন্য অগ্রিম ৪৫ লক্ষ টাকা
প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সময়ে উক্ত এন্টিক মেটাল কয়েন ক্রয়ের জন্য তাদের
চাহিদা মোতাবেক আরো ৭৫ লক্ষ টাকা নগদ এবং ৫০ লক্ষ টাকার ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ এর
একটি চেক প্রদান করেন।
পরবর্তীতে
তিনি যাচাই বাছাই করে জানতে পারেন যে, উক্ত ধাতব মুদ্রা ভুয়া এবং তিনি অভিনব প্রতারণার
শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ডিএমপির আদাবর থানায় একটি নিয়মিত মামলা
দায়ের করেন।
থানা
সূত্রে আরো জানা যায়, মামলার প্রেক্ষিতে আদাবর থানার একটি অভিযানিক দল আদাবর থানার
বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে
এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নগদ অর্থ উদ্ধার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, গ্রেপ্তাররা আন্তঃজেলা ম্যাগনেটিক কয়েন প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে ম্যাগনেটিক কয়েনের প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে প্রতারণা করে আসছে। তারা তাদের এ অভিনব প্রতারণার ফাঁদে ফেলার জন্য আরো কয়েকজনকে টার্গেট করেছিলো মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। গ্রেপ্তারদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।