আসিফ মাহমুদের ভাষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার ‘বিস্তারিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১৯:৫২

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি- সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও উপদেষ্টাদের বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে আলোচনা হয়েছিল, তার মধ্যে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকারের প্রধান করার আলোচনার সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর বিরোধিতা করেছিলেন এই বলে যে, তিনি দণ্ডিত।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ এনে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে সেনানিবাসে গত ১১ মার্চ তাদের উপস্থিতিতে আলোচনার আদ্যোপান্ত প্রকাশের পর ফেসবুকে আসিফ মাহমুদের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন শুক্রবার। সেখানে এসব কথা বলা আছে।
এই ভিডিওটি কবে ধারণ করা এবং কোন সময়ের ঘটনার বর্ণনা এখানে দেওয়া হচ্ছে সেটি উল্লেখ ছিল না।
যোগাযোগ করা হলে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এই সাক্ষাৎকারটি ১৫ই মার্চ রেকর্ড করা হলেও টিভি চ্যানেল থেকে পরবর্তীতে ছাড়তে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। আমাদের কাছে থাকা ভার্সনটি তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হলো।”
ভিডিওতে আসিফ মাহমুদকে বলতে শোনা যায়, “সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটোটা (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রশ্নে) ছিল, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনুস কেন? অন্য কেউ কেন নয়’।”
এলজিআরডি উপদেষ্টার ভাষ্য, “সেনাপ্রধান আমাদের বলেছিলেন, ড. ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিক্টেড পার্সন। একজন কনভিক্টেড পার্সেন্ট কিভাবে একটি দেশের উপদেষ্টা হয়?”
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত শ্রমিক ঠকানোর মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসসহ ছয় জনতে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়। তবে সেদিনই জামিন দেওয়ায় তাকে কারাগারে যেতে হয়নি।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এই মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আলোচনায় ইউনূসের নাম বিবেচনায় এই সাজা ছিল একটি বাধা। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ইউনূসের সরকারে থাকার কোনো আইনি সুযোগ ছিল না।
অবশ্য শপথ গ্রহণের আগের দিন ৭ আগস্ট সেই সাজা বাতিল করেন ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়াল, ফলে ইউনূসের সামনে সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো বাধা ছিল না।
শ্রম আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজার রায়ের ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তা যে আপিল করেছিলেন, তার শুনানি হওয়ার কথা ছিল গত ১৪ অগাস্ট। কিন্তু তার আগেই ইউনূসকে সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা জানায় আওয়ামী লীগের পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর সেই শুনানি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনা হয় এবং ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
ভিডিওতে দেখা যায় আসিফ মাহমুদ আরও বলছেন, “সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ এই লোককে (ড. ইউনুস) দেখতেই পারে না। বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে। এই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত?”
তবে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে সেনাপ্রধান তার আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন বলে আসিফ মাহমুদের ভাষ্য। ভিডিওতে দেখা যায় উপদেষ্টা বলেন, “সেনাপ্রধান শেষে আমাদেরকে বলল, বুকে পাথর চাপা দিয়ে আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি।”