Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নির্বাহী আদেশ নয়, বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চান হাসনাত

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১৯:১৩

নির্বাহী আদেশ নয়, বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চান হাসনাত

ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

আওয়ামী লীগের পতন ভোটের মাধ্যমে নয় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়েছে উল্লেখ করে দলটিকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সুযোগ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাইলেও তা নির্বাহী আদেশে বদলে বিচারের মাধ্যমে হতে হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।

শনিবার রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের’ দাবিতে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের পতন ভোটে না গণঅভ্যুত্থানে হয়েছে। বাংলাদেশে সব হবে কিন্তু তা আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে। তবে আমরা নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাই না। আওয়ামী লীগ যে অপরাধ করেছে সেই বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই তারা কখনও রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না।

গত বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা চেয়ে’ তখনকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাস আব্দুল্লাহ রিট আবেদন করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে। পরে অবশ্যই এই দুই তরুণ নেতা বলেছিলেন তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে নয় বরং দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিট করার একদিন পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করে নেন হাসনাত ও সারজিস।

এনসিপির সমাবেশে হাসনাত বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, ভারতীয় শক্তির এক্সটেনশন। এরা ভারতের নাটাইয়ে চলে। আমরা ৫ তারিখ সেই সুতা কেটে দিয়েছি।” সাত মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে নতুন করে দাবি ওঠার শুরুটা হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনাই তাদের নেই।

এর প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেন, “ড. ইউনুস, আওয়ামী লীগ ৫ই আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তর পাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।”

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করে একদল ছাত্র। তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা সাড়ে ১৫ বছর প্রতাপের সঙ্গে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের রক্তাক্ত এক অভ্যুত্থানে।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ১ জুলাই শুরু হওয়া এই আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিও জড়িয়ে যায়, যদিও নেতৃত্বে সামনে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন।

সরকার পতনের দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। এরপর দলটির কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়, দলটির শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে গেছেন, দলটির কার্যক্রম এখন মূলত ফেসবুককেন্দ্রিক।

আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনাটিকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে শেখ হাসিনা ও তার সরকার এবং দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকে আসামি করা হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ দলটি অস্বীকার করছে এবং প্রাণহানির ঘটনায় আন্দোলনকারী এবং দেশ-বিদেশের ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনেছে দলটি।

এর মধ্যে সেনানিবাসে গত ১১ মার্চ একটি বৈঠকে আওয়ামী লীগের পরিশুদ্ধ হয়ে ফেরার প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়ে বিস্তারিত পোস্ট দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। জানান, তাকে এবং অন্য একজনকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে একমত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে নাগরিক পার্টির সমাবেশে হাসনাত বলেন, “জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিল, জিয়াউর রহমানকে তারা জীবন দিয়ে সেই দায় মেটাতে হয়েছে। জামায়াত তাদের নেতাদের জীবন দিয়ে সেই দায় পূরণ করেছেন। আমরা তাদের সুযোগ তৈরি করে দিলে আমাদেরও সেই দায় মেটাতে হবে।”

এনসিপির নেতা হাসনাত বলেন, “যে বাংলাদেশে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, পিলখানা, মোদীবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হয়নি সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে না। দশটা নমরুদ ও দশটা ফেরাউন মিলেও একটা হাসিনা হতে পারবে না।”

সম্প্রতি আওয়ামীলীগ পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিতর্ক ও সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমরা কোনো ইনস্টিটিউশনের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে চাই না। তবে ইনস্টিটিউশনের কর্তাদের বলব, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দিন। আপনারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকুন। আপনারা গত ১৬ বছর রাজনৈতিক মাঠে যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে তা আর হবে না। ২৪ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দল। সংস্কার কার্যক্রমের পর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই পরিবেশ তৈরিতে আপনারা বাধা হয়ে না দাঁড়াবেন না।”

সমাবেশে অংশ নিয়ে এনিসিপির অন্যতম নেতা মাহিন সরকার বলেন, “আওয়ামী লীগকে বিচার প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করতে হবে। যে আওয়ামীলীগ বিডিআর, শাপলা, মোদীবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড ও আবরার-বিশ্বজিৎদের হত্যা করেছে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের নাম ঠিকানাও নাই। এদেশেও আওয়ামীলীগের কোনো রাজনীতি চলবে না।”



Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫