একবিন্দু রক্ত থাকতেও গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই রাজনীতিতে ফিরতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সমাবেশে। শনিবার রাজধানীর শাহবাগে নবগঠিত দলটির মহানগর শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। 

সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমাদের পুনর্জন্ম হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না। “তাদের (আওয়ামী লীগ) হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন। তাদের রক্তের শপথ নিয়ে আমরা এক বিন্দু রক্ত থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেব না।

"গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কেন আওয়ামী লীগের বিচার শুরু হয়নি সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নিবন্ধন বাতিল করিয়েই ছাড়বে।"

গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের করা একটি মন্তব্যের পর থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সামনে আসে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এর আলোচনায় সেদিন সরকার প্রধান বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে দলটির যেসব নেতাকর্মী হত্যা, লুটপাটে জড়িত ছিলেন, আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।

এরপর সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তাদেরকে ‘পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের’ ফেরার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেনানিবাসে একটি বৈঠকে।

এরপর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটি আলোচনায় বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো দেশীয় শক্তি নয়। এটা মূলত বিদেশ থেকে প্রথিত একটা শক্তি। এটার নাটাই ধরে রাখা হয়েছে দিল্লিতে। আর ঘুড়ি উড়ে বাংলাদেশে। এই ঘুড়ি আর বাংলাদেশে উঠতে দেওয়া হবে না।”

দুদিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে একই দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওরিয়র্স অব জুলাই নামে অন্য একটি সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশে বলেছে, কোনো দল যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে সেই দলের অস্তিত্ব রাখা হবে না।এনসিপি নেতা আখতার বলেন, "বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা বা তাদের আদর্শের কোনো রাজনীতি চলবে না, সেটির নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে।

“প্রধান উপদেষ্টা যে ‘জুলাই সনদের’ কথা বলেছেন, সেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।"২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহ, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হটাতে শাপলা চত্বরে অভিযানে গণহত্যার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগকে এর জন্য দায়ী করা হয় সমাবেশে।

আখতার বলেন, "পিলখানা, শাপলা চত্বর ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ এখনও স্বীকার করেনি। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, দেশের ছাত্র-জনতা তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।"আওয়ামী লীগের মধ্যে ভালো নেতৃত্ব আছে—এমন বক্তব্যকেও নাকচ করেন এনসিপি নেতা।

তিনি বলেন, "লোম বাছতে গিয়ে যেমন কম্বল উজাড় হয়ে যায়, তেমনি আওয়ামী লীগের ভালো নেতৃত্ব খুঁজতে গেলে গোটা দলই উজাড় হয়ে যাবে। এদের কোনো ভালো নেতৃত্ব নেই।"সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হোসাইন সিএফ, রফিকুল ইসলাম আইনীও বক্তব্য রাখেন।