গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলো কখনও সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেতা সারজিম আলম।

শনিবার রাজধানীতে এক ইফতার অনুষ্ঠানে সারজিস বলেন, “আমরা একটি বিষয় স্পষ্ট করি। আমরা মনে করি যে, সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানের ওপর আমাদের সবার আস্থা আছে। এ শ্রদ্ধাবোধ আমাদের সকলেরই আছে। আমরা এটা হারাতেও চাই না।” সুতরাং সেনাবাহিনিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখার কোন প্রশ্নই আসে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সাবেক নেতা বলেন, “সেনাবাহিনী যে প্রতিষ্ঠানটি, জাতীয় নাগরিক পার্টির জায়গা থেকেও, আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকেও যদি বলি, আমরা তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধটি ছিল, এবং আমরা এটা রাখতে চাই। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তারা যেমন বাংলাদেশের মানুষের পাশে ছিল, একই ভাবে আগামীতে তারা বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে।”

“যে একটি ঘটনা সামগ্রিকভাবে আমরা শুনতে পাচ্ছি, আমরা মনে করি বিষয়টি অনেকটি এমন নয়। এখানে জনগণের সাথে কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টির সাথে কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে সরাসরি সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ করার কোনো বিষয় নেই। আমাদের যদি কোন একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কোনো একটি প্রশ্ন থাকে, মতামত থাকে আমরা সেটি করব এবং যৌক্তিক আলোচনা, সমালোচনা হবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা যারা অভ্যুত্থানের শক্তি ছিলাম এ বিষয়ে আমরা কখনওই মুখোমুখি দাঁড়াব না।”

সেনানিবাসে গত ১১ মার্চ একটি বৈঠকে আওয়ামী লীগের পরিশুদ্ধ হয়ে ফেরার প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়ে বিস্তারিত শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন এনসিপির আরেক নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। জানান, তাকে এবং অন্য একজনকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে একমত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের এই পোস্ট এরই মধ্যে আলোচনার ঝড় তোলে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, ভেঙে দেওয়া সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন ও ভেঙে দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে ‘পুনর্বাসন’ করার কথা বলা হয় বলেও উল্লেখ করেন হাসনাত।

পোস্টে হাসনাত লেখেন, ‘পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগ এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের ‘অপরাধ’ স্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ করার প্রতিশ্রুতি দেবে বলেও প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানান তিনি।

তবে এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিক ফিরিয়ে দিয়ে হাসনাত প্রস্তাবদাতাকে বলেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।”

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, আওয়ামী লীগ ফেরাতে হলে তাদের লাশের ওপর দিয়েই ফেরাতে হবে। এরপর আমরা বৈঠক অসমাপ্ত রেখেই চলে আসেন।

এরপর হাসনাত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ প্রকাশ করেন, যাতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার বিষয় তুলে ধরা হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবে রংপুর বিভাগ রিপোর্টার্স ফোরামের (আরডিআরএফ) ইফতার মাহফিলে সারজিসের বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের কাছ থেকে সেনাবাহিনী নিয়ে অবস্থান প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন আসে।

সংবাদিকদের সারজিস আলম বলেন, “আমরা একটি বিষয় স্পষ্ট করি। আমরা মনে করি যে, সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানের ওপর আমাদের সবার আস্থা আছে। এ শ্রদ্ধাবোধ আমাদের সকলেরই আছে। আমরা এটা হারাতেও চাই না।”

সেনাপ্রধানকে সরানোর কোন বিষয় আসেনি বলে বিষয়টি ‘গুজব’ আখ্যা দেন তিনি।

সারজিস বলেন, “সেনাবাহিনীর প্রধানকে সরানো বা এমন প্রশ্ন কখনও আসে নি। কিছু গুজব ছাড়ানো হচ্ছে। যে সেনাবাহিনীর প্রধানকে অপসারণ … না, আমাদের জায়গা থেকে কখনও এটি বলিনি। আমরা মনে করি এ অবস্থাও তৈরি হয় নি এবং এ অবস্থান যাতে নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তৈরি না হয়, সেটি আমরা প্রত্যাশা করি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে শ্রদ্ধার জায়গা, আমরা মনে করি সব সময়ে ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে।”

নির্বাচন নিয়ে এনসিপির নেতা সারজিস আলম বলেন, “সরকার বলেছে, বিএনপি তাদের পক্ষ থেকে বলেছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে বলেছি। যে সরকার যদি ডিসেম্বর, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে, আমাদের এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিমত থাকবে না। বরং ওই সময়টা (নির্বাচনের) নির্দিষ্ট করা হোক এবং আমরা সেটাকে সামনে রেখে সকল ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের ভেতরে নির্বাচন কবে হবে সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না থাকুক।”