মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যেন ‘জনস্বার্থবিরোধী’ না হয়ে উঠে, সে জন্য নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ।

শনিবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় দলটির নীতির কট্ট সমালোচক এই বুদ্ধিজীবী দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশার কথা বলেন।

জুলাই ‘গণহত্যার’ তদন্ত ও বিচার শেষ করা, সারাদেশে অব্যাহত নারী-শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় নারী শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করাসহ নানা দাবিতে এই সমাবেশ হয়।

সমাবেশে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলারও প্রতিবাদ জানানো হয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমান যে সরকার আছে, এই সরকার যেন অতীতের সরকারের মতো জনস্বার্থ বিরোধী না হয়ে উঠে, সেই জন্য এই ধরনের সমাবেশ দরকার।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশে সকলের প্রতিনিধিত্ব দরকার। কিন্তু আমরা উলটো দেখছি বৈষম্যবিরোধী গোষ্ঠী, নারী, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“নারীর প্রতি হামলা নিপীড়ন বেড়েছে। আমরা দেখছি একটি গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে; তারা নারীর উপর নিপীড়ন, সংখ্যালঘু মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।”

ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন বেড়েছে বলে মত দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নেতা বলেন, “দেশে কোন বয়সের নারী এখন নিরাপদ বোধ করছে না।”

দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব’ সৃষ্টে হলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয় সমাবেশে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “একটি গোষ্ঠী নারীর স্বাধীনতা ও নারীর সক্রিয়তায় বাধা দিতে উঠে পড়ে লেগে আছে। তারা বাঙালি-আদিবাসী, নারী-পুরুষ , শাপলা শাহবাগ বিভাজন করেন।

“সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, উল্টো যারা ধর্ষণ-নারী নিপীড়ন, মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের প্রতি সরকার ও তার এজেন্সিগুলো বেশ আগ্রাসী হয়ে যাচ্ছে।

লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত, যার প্রধান ব্যক্তি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, সেই গ্রামীণ ব্যাংকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, তারা এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।

“তারা ৩২ বছর ধরে মাস্টাররোলে চাকরি করছে, কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি।”

সরকারের উপর যে জনগণের নজরদারি দরকার বলেও মত দেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “সরকারের সকল পর্যায়ের সব ধরনের তথ্য রাখতে হবে। সরকার কখন কী করছে, কারা করছে, তাতে জনগণের স্বার্থ কী?”

যারা ধর্মীয়, লৈঙ্গিক ও জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করে তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ করা হয় সমাবেশে। আনু মুহাম্মদ বলেন, “তারা গত সরকারের বিভিন্ন সুবিধাভোগী। বৈষম্যবাদী গোষ্ঠী যারা অতীতে সরকারের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছে, সরকারের মধ্যে কাদের আধিপত্য রুখতে না পারলে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন সম্ভব না।”

সমাবেশে সাইবার সুরক্ষা আইন বাতিল, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে ১২ ছাত্রনেতার নামে করা মামলা প্রত্যাহার ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ ৪ দাবিতে ৩৬ টি ছাত্র, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও অ্যাক্টিভিস্টদের আয়োজনে ছাত্রজনতার সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে নাটক এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় হয় সংগীতানুষ্ঠান।

বক্তব্য রাখেন সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারীর সংগ্রাম পরিষদের সমন্বায়ক শামীম ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশায়েদা সুলতানা পাখি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভানেত্রী সীমা দত্ত।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।