বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশ স্বাধীন: লেখা মাত্রই এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ২০:১৩

প্রত্যাহারকৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা কায়ছান। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-বাংলাদেশ স্বাধীন! এরপর শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, স্বাধীনতা দিবসে এক সরকারি কর্মকর্তার ফেসবুক পাতায় এমন লেখা পোস্ট করার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা কায়ছানকে।
বুধবার দুপুরে স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা চলার মধ্যে ডিসি মোহাম্মদ দিদারুল আলম এই সিদ্ধান্ত নেন।
তবে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেন বলেছেন, এসিল্যান্ড দাবি করেছে লেখাটি তিনি লিখেননি। তার আইডির পাসওয়ার্ড অনেকের কাছে ছিল।
“ডিসি মহোদয় বলেছেন তাকে আপাতত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে পাঠাতে, পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে”, বলেন তিনি।
সকালে সরাইল এসিল্যান্ডের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্টে লেখা হয়, "পৃথিবীর বুকে বাংলার নাম আজ উজ্জ্বল, লড়াইয়ের ইতিহাসে লেখা হলো অনন্য মহিমা, সেখানে বীরত্বের গান বাজে নিঃশব্দে, শাসকগোষ্ঠীর শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির সীমানা।
“১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়। সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-বাংলাদেশ স্বাধীন! এরপর শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়, কিন্তু এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ২৬শে মার্চেই। তাই এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সংগ্রামের চেতনা এবং আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল।”
সকালেই এসিল্যান্ড সিরাজুম মুনিরা সরাইল অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে যান। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের তোপের মুখে মাঠ থেকে ফিরে আসেন।
এর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সেই পোস্ট মুছে আরেকটি পোস্টে বলা হয়, আগের পোস্টটি ‘ফেসবুক হ্যাক করে’ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে সরকারি পাঠ্যবইয়ে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম সংযোজন করেছে, যদিও এই প্রশ্নে দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, এই ঘোষণা দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম এ সালামের দায়ের করা এক জনস্বার্থ রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই এই রায় দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালতের রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তারের পূর্বেই শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।