Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

‘ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া?’, উপদেষ্টা আসিফের পোস্টে হাজারো যাত্রীর অভিযোগ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৯:২৮

‘ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া?’, উপদেষ্টা আসিফের পোস্টে হাজারো যাত্রীর অভিযোগ

এবার লম্বা ছুটিতে ঈদে বাড়ি ফেরার চাপ তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে। বাসে-ট্রেনে এখনও উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি।

ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর কয়েক হাজার ভুক্তভোগী তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

এবারের ঈদে বাড়তি বাস ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না বলে গত কদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন আসছে, সেসব প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ারও করছেন অনেকে। এর মধ্যে উপদেষ্টার পোস্টে এই কমেন্টগুলো অনেকটাই বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে।

এদিন ভোরে উপদেষ্টা আসিফ তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লেখেন, “ঈদ যাত্রায় কোন কোন রুটে/বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে জানান।”

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এই পোস্টে প্রায় ৩১ হাজার কমেন্ট পড়েছে, এর মধ্যে সিংহভাগই বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করছেন, যাদের মধ্যে একজন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য জিমি আমির।

তিনি লিখেছেন, “ঢাকা বগুড়া-রংপুর-দিনাজপুর-গাইবান্ধা-জয়পুরহাট। উত্তরবঙ্গের সব রুটে। কমপক্ষে আড়াইশ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।”

জিমির বাড়ি উত্তরবঙ্গের বগুড়ায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল টানা ৫০টি কমেন্ট পড়ে ৩১টিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ দেখতে পেয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটি কমেন্টে এই পোস্টের প্রশংসা করে নজরদারির আহ্বান জানানো হয়েছে, কিছু কমেন্টে অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখা হয়েছে, কিছু কমেন্টে কটাক্ষ করা হয়েছে। 

একটি কমেন্টে লেখা হয়েছে, “কাউন্টার থেকে ভাড়া বেশি না নিলেও। রাস্তায় কৌশলে সকল যাত্রী উঠাচ্ছে এবং ডাবল ভাড়া নিচ্ছে।”

কেউ নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ, কেউ তিন গুণ আদায়ের অভিযোগও করছেন। কেউ বলছেন, টিকিটের গায়ে ঈদ মোবারক লিখে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে।

প্রতিবার ঈদ আসলেই পরিবহন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যাত্রীদের থেকে কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায়ের।

এবার লম্বা ছুটি থাকায় গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই বাড়ির পথে মানুষের যাত্রা শুরু হয়, শনিবার ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিনেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি।

এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের ফ্লাইওভারগুলো চালু হয়ে যাওয়া, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হওয়া, যমুনায় রেল সেতু চালু হওয়া, পদ্মা সেতু হয়ে বেশ কটি ট্রেন চালু, ইত্যাদি নানা কারণে এবার ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বস্তির।

যাত্রী চাপ তুলনামূলক কম হওয়ায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ দৃশ্যত কম পাওয়া গেলেও উপদেষ্টা আসিফের পোস্টে মানুষদের কমেন্ট দিচ্ছে ভিন্ন সাক্ষী।

আবার যেসব বাস তার গন্তব্যে পথে যাত্রী নামিয়ে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া আদায় করত, সেগুলো এই সময়ে পথে যেখানেই নামুক না কেন, যাত্রীদেরকে পুরো পথের ভাড়া দিতে বাধ্য করছে।

বাড়তি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফের পোস্টে সাংবাদিক ফারদিন ফেরদৌস লিখেছেন, “কোথায় নয় মিস্টার অ্যাডভাইজার? একদল খেয়ে ভেগেছে, আরেকদল জুড়ে বসেছে।”

হামিম আশরাফি আকাশ লিখেছেন, “ঢাকা-কালিশুরী (পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার একটি ইউনিয়ন) বাসে ধোলাইপাড় থেকে ৬০০ টাকার ভাড়া, নিচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা।”

জুবায়ের আহমেদ লিখেছেন, “গুলিস্তান-বাবুরহাট-চাঁদপুর রুটে দেড়শ টাকার ভাড়া ঈদ উপলক্ষে টিকিটের গায়ে ঈদ মোবারক লিখে আড়াইশো নিচ্ছে আর অতিরিক্ত যাত্রী তো আছেই। বিষয়টি দেখার অনুরোধ রইল।”

নাজনীন নাহার লিখেছেন, “রৌমারী টু ঢাকা রুটে রিফাত, পলি, সিয়াম পরিবহনসহ আরও অনেক গাড়ি রয়েছে। সাধারণত ৭০০ টাকা ভাড়া হলেও নিয়েছে ১০০০ টাকা।”

কৌশলী ভাড়া আদায়

কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যশোরের টিকিট চাইলে বলা হয় ভাড়া ৭৫০ টাকা। যদিও এ রুটে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া কোম্পানিভেদে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার কর্মী বলেন, “আমাদের যশোর পর্যন্ত কোনো বাস নেই। শেষ গন্তব্য বেনাপোল, খুলনা বা সাতক্ষীরা। আমাদেরকে শেষ গন্তব্যের ভাড়া  দিতে হবে।”

হানিফ পরিবহন, গোল্ডেন লাইন, সাতক্ষীরা পরিবহন, গ্রিন লাইন পরিবহনেও একই চিত্র দেখা যায়। 

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

শনিবার সকালে সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে কয়েকটি বাস কাউন্টারে অভিযান চালান ভোক্তা অধিকারের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস।

এ সময় ইকোনো সার্ভিসের দুটি কাউন্টারে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় এক লাখ টাকা, হানিফ পরিবহনের কাছ থেকে ২০ হাজার ও জোনাকি পরিবহন থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক বলেন, “বিআরটিএ কর্তৃক প্রতিটি বাস টার্মিনালে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের টিম সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর রয়েছে। বাড়তি ভাড়া আদায়সহ যাত্রীদের সকল সমস্যার সমাধানে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” 



Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫