বৃষ্টি উপেক্ষা করে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে উপকূলবাসী

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মে ২০২০, ১২:২০

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আমফান আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলাবাসী। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে এক সাথে থেকেছে তারা। এর মধ্যে ছিল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা।
যারা নিজ বাড়িতে ছিলো তারাও ঝড় আতঙ্কে কাটিয়েছে নির্ঘুম রাত। এর মধ্যে রাতভর আশ্রয়কেন্দ্র এসেছে মানুষ। সকালেও এসেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার গবাদি পশুও নিয়ে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
বেলা ১১টা পর্যন্ত সরকারি হিসেবে বাগেরহাটের প্রায় এক লক্ষ ৩৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। ১৫ হাজার গবাদিপশুকেও আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে রাখা হয়েছে।
বুধবার (২০ মে) সকাল থেকে মুশল ধারে বৃষ্টির সাথে জড়ো হাওয়ার মধ্যে সবাই আরো বেশি আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছেন ঘূর্ণিঝড় আমফানের। বাগেরহাটের নদ-নদীতে দ্রুত গতিতে পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত জারির পর আতঙ্কে বেড়েছে কয়েকগুণ।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর পাড়ের বগী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বলেশ্বর নদীর পাড়ে আমাদের বসবাস। বন্যার খবর পেয়ে রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। সেখানে করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে ঠাসাঠাসি করে অবস্থান করছি। শুনেছি ঝড়ের ফলে ১০ ফুট পানি উঠবে। তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু সবকিছু ভেসে যাবে। কিছু থাকবে না।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, কৃষক সামসুর রহমান, রুহুল আমিনসহ কয়েক জন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম সারারাত। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে কি ঘুমানো যায়। এর সাথে রয়েছে বাড়ি-ঘরের চিন্তা। সারারাতই একে অপরের সাথে সিডরের বিভৎস্যতা ও আমফান কত ভয়ঙ্কর হবে সেই আলোচনা করে কাটিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত শোনার পরে পরানে আর পানি নেই। এখন আল্লাহ ই আমাদের ভরসা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষ অবস্থান করছেন। অনেকেই নানা সমস্যার কারণে সেহরী খেতে পারেননি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুজ্জামান বলেন, রাতে শরণখোলার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র আমরা পরিদর্শন করেছি। আশ্রয় নেয়া মানুষের খোজ খবর নিয়েছে। আমরা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় দুর্গত মানুষদের শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের খবরের পর থেকে জেলাব্যাপি ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বুধবার(২০ মে) সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় এক লক্ষ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র নিয়েছি। ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দুর্গতদের জন্য কাজ করছে। প্রত্যেক উপজেলায় জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। জেলা সদর ও ৯টি উপজেলা মোট ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে মানুষের জানমালের কম ক্ষতি হয় সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।