দিল্লি সাড়া না দিলেও ইউনূস-মোদী বৈঠক নিয়ে ‘আশাবাদী’ ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩৪

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন খলিলুর রহমান (মাঝে)। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
ভারত সাড়া না দিলেও বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক নিয়ে এখনও আশবাদী বাংলাদেশ। সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা এই বৈঠকের জন্য সরকারিভাবে অনুরোধ করেছি। আমাদের আশা করার সংগত কারণ আছে যে, বৈঠকটি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।”
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিকে প্রস্তাব দেয় ঢাকা। তবে গত ২৮ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠকটিই হবে একমাত্র দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘গুম-খুন’ এবং শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ এনে সেগুলোর বিচারের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দেশে ফেরত পাঠাতে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি।
ইউনূস সরকারের অভিযোগ, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচারের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত সরকার।
বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে কূটনীতিক তলবের পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটেছে।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার আশা করছে দুই সরকারপ্রধানের বৈঠক হলে কূটিনৈতিক সম্পর্কের স্থবিরতা কেটে যাবে। পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন ২৫ মার্চ এক সম্মেলনে বলেন, “ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমরা আশা করি যে, যদি এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে স্থবিরতা, সেটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানের কাছে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য তুলে বৈঠক বিষয়ে জানতে চান।
খলিলুর রহমান উত্তরে বলেন, “আমার জানা মতে, পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, ‘বৈঠকটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে’। আমরা এই বৈঠকের জন্য সরকারিভাবে অনুরোধ করেছি। আমাদের আশা করার সংগত কারণ আছে যে বৈঠকটি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে যে, মিটিংটি হতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হচ্ছে, আগ বাড়িয়ে কিছু বলছি না।”
প্রধান উপদেষ্টার এই হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান। আমরা আশা করছি, অন্যান্য সব সদস্য রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিনিধি এই সুযোগে বিমসটেকের আগামী দিনের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন। সে কারণে আমরা ভাবছি, এই সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা আছে।”
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য ফেরামটির সভাপতির দায়িত্ব নেবে। সেকারণে এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। শুক্রবার রাত ৮টায় তিনি দেশে ফিরবেন। আর নরেন্দ্র মোদী বিমসটেকের বৈঠকে যোগ দিতে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন বৃহস্পতিবার। পর দিন তিনি সরকারি সফরে ব্যাংকক থেকে চলে যাবেন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়।
এদিকে সদ্য চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য (সেভেন সিস্টার্স) নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, “অত্যন্ত সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। এর ব্যাখ্যা যদি অন্যরকম দেওয়া হয়, আমরা সেই ব্যাখ্যা ঠেকাতে পারছি না। আমরা শুধু সবার সমান লাভের জন্য কানেক্টিভিটি দিতে আগ্রহী আছি, কেউ নিলে ভালো, না নিলে নেবেন না।”
তিনি বলেন, “কানেক্টিভিটি এই অঞ্চলের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। বিশেষ করে যাদের জন্য সমুদ্রে অ্যাক্সেস পাওয়া খুব কঠিন। আমরা কিন্তু কানেক্টিভিটি জোর করে চাপিয়ে দেব না, সেটা করার মতো অবস্থাও আমাদের নেই। কেউ যদি নেয় খুব ভালো, না নিলে কী করব আমরা, কিছু করার নেই।”
খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সেভেন সিস্টার্স নিয়ে এই প্রথমবার কথা বলেননি। তিনি ২০১২ সালে একই ধরনের কথা বলেছিলেন। এর চাইতে একটু এগিয়ে গিয়ে ২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ একটা ভ্যালু চেইনে আবদ্ধ করা এবং তিনি এ প্রসঙ্গে একটা একক অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথাও বলেছিলেন, যেটাকে বিগ বে ইনেশিয়েটিভ বলে গণ্য করা হয়।”