Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ট্রাম্পের শুল্কনীতি: দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ চায় পোশাক ব্যবসায়ীরা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৯

ট্রাম্পের শুল্কনীতি: দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ চায় পোশাক ব্যবসায়ীরা

একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন নারী শ্রমিক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আগে ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন এ শুল্কারোপের হার প্রতিবেশী দেশ চীন, ভারত এবং পাকিস্তান থেকে বেশি।

নতুন করে উচ্চমাত্রায় এই মার্কিন শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, হঠাৎ করে দ্বিগুণেরও বেশি শুল্কারোপের কারণে পোশাক রপ্তানি খরচ বেড়ে যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ শিল্প। অনেক কারখানা বন্ধ হতে পারে। পোশাক শ্রমিকদের বেকারত্বের মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি করে, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর পরিচালক মহিউদ্দিন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় ৬০ টা দেশের উপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। আামদের দেশের জন্য তা দ্বিগুনের বেশি করা হয়েছে। শুল্কারোপের ধরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে আমেরিকান পণ্যে যে দেশে যে পরিমান শুল্ক বিদ্যমান আছে তার নূন্যতম অর্ধেক করা হয়েছে অথবা ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে পোশাকের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিযোগী দেশ বিশেষ করে চীনের উপর ৬৭ শতাংশের এর বিপরীতে ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৯০ শতাংশের বিপরিতে ৪৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার বিদ্যমান ৬৪ শতাংশের বিপরিতে ৩২ শতাংশ এবং ভারতের ৫২ শতাংশ এর বিপরিতে ২৬ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে নিশ্চিতভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের রপ্তানিখাত ক্ষতির মুখে পড়বে।”

“কারণ নতুন শুল্কনীতির ফলে সেদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক বানিজ্য ব্যাহত হবে। তাই সরকার অবশ্যই এটাকে গুরুত্বের সাথে দেখবে। এবং যতদ্রুত সম্ভব একটা সমাধান বের করবে এটা আমরা প্রত্যাশ করি,” তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে তৈরি পোশাক বিক্রির প্রতিযোগিতায় বিশ্বে প্রথম চীন, দ্বিতীয় ভিয়েতনাম, তৃতীয় বাংলাদেশ, চতুর্থ ইন্দোনেশিয়া এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত।

অনেকে মনে করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং সেখানে স্বাক্ষরিত নয়টি চুক্তি, এক চীন নীতির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন এবং সেভেন সিস্টার্স অঞ্চল নিয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্য হঠাৎ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।

বিশেষ করে, চীনকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি।

ওয়াশিংটন-বেইজিং প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ নতুন মাত্রা পেয়েছে। হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে বড় আকারের ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাল্টা (রেসিপ্রোকাল) শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন, যা দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাট/ডব্লিউটিও কাঠামোর মূল স্তম্ভ হিসেবে থাকা ‘সর্বাধিক অনুকূল দেশ’ (MFN) নীতির সমাপ্তি বা অন্তত উল্লেখযোগ্য রূপান্তরের সংকেত বহন করছে। এই নীতির ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার, কারণ বিভিন্ন মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ভিন্ন ভিন্ন পারস্পরিক শুল্কহার আরোপিত হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট পণ্যের ক্যাটাগরির ওপর শুল্কের হারও পরিবর্তিত হচ্ছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বিজয়ী ও পরাজিত দেশ নির্ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিবেশ আরও অস্থির ও অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।” 

“বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পরিবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে, কারণ তারা এমন এক অনিশ্চিত ব্যবস্থায় কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। এই নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বাংলাদেশকে তার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নীতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সংস্কারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং মূল বাণিজ্যিক অংশীদারদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে, যাতে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় তার অবস্থান নিরাপদ থাকে।”  

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক পুনর্বিবেচনা করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুত শুল্ক যুক্তিসঙ্গত করার বিকল্পগুলি চিহ্নিত করে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আমাদের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আমরা একসাথে কাজ করে আসছি, সুতরাং মার্কিন সরকার আমাদের শুল্ক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি। 


 



Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫