Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ধর্ষণ মামলায় জামিন ও ন্যায়বিচার

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৭

ধর্ষণ মামলায় জামিন ও ন্যায়বিচার

প্রতীকী ছবি

দেশে ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। মাগুরার শিশু ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। যার ফলে দেশের কর্তা ব্যক্তিরাও নড়েচড়ে বসেছেন। সরকার ধর্ষণ মামলায় জামিনের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ধর্ষণের মামলা হলে আসামিকে কোনো অবস্থায়ই জামিন দেওয়া যাবে না। ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। এ ছাড়া ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। এটি ভালো ও সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। 

ধর্ষণ নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। বিচারহীনতার কারণে এর বিস্তার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধীরা যখন জানতে পারে সহজেই আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে, তখন  অপরাধপ্রবণতা বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। তাই ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোরতা প্রয়োজন। জামিনের সুযোগ না থাকলে অপরাধীরা ভয় পাবে। ন্যায়বিচারের পথ সুগম হবে। সেই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে এই সিদ্ধান্তের ফলে যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি মিথ্যা মামলার শিকার হন তার কী হবে? কারণ আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থায় মিথ্যা মামলা নতুন কোনো বিষয় নয়। ব্যক্তিগত শত্রুতা, প্রতিশোধ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হতে পারে। বিগত সময়েও আমরা এর দৃষ্টান্ত দেখে এসেছি। 

জামিনের সুযোগ না থাকলে একজন নিরপরাধ মানুষও দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটকে থাকতে পারেন, যা তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তাই বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষায় সতর্কতা প্রয়োজন। সরকার ধর্ষণের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতা করেছে এটা ইতিবাচক। তবে দেশের তদন্ত সংস্থাগুলোর সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত বিলম্বিত হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে গাফিলতি থাকে। অপরাধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক যোগসাজশের কারণে সঠিক প্রতিবেদন পাওয়া যায় না। এ ছাড়া দেশে ধর্ষণ মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ছে না। 

বর্তমানে যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেগুলোর ওপর আগে থেকেই প্রচণ্ড মামলার চাপ রয়েছে। ফলে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি স্বপ্ন হিসেবেই থেকে যেতে পারে। যদি না পর্যাপ্ত ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়। অধিক বিচারক নিয়োগ করা হয়। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, উপযুক্ত ক্ষেত্রে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই মামলা চলতে পারবে। এটি কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। তবে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি যদি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন পর মামলা করেন তখন কী হবে সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। অপরাধী যদি আইনের ফাঁক খুঁজে বের হয়ে যায়, তাহলে ন্যায়বিচার স্বপ্ন হয়েই থাকবে। বর্তমান সরকার ধর্ষণ প্রতিরোধ ও বিচারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। সেই সঙ্গে মানবাধিকার ও বিচারের সঠিক মানদণ্ড বজায় রেখে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। কঠোর শাস্তির পাশাপাশি নিরপরাধ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। জামিন পুরোপুরি বন্ধ না করে কঠোর শর্তযুক্ত জামিনের ব্যবস্থা করা হলে নিরপরাধ ব্যক্তি তার ন্যায়বিচার পাবে। একজনকে ন্যায়বিচার দিতে গিয়ে অপর জনকে বঞ্চিত করা হলে ন্যায়বিচার আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তদন্ত সংস্থা ও বিচারকদের জবাবদিহির আওতায় আনা যেতে পারে। যাতে কারো বিচার নিয়ে গাফিলতি বা অন্যায় না হয়। 

আইন কঠোর হওয়া দরকার। সেটা অপরাধীর জন্য হতে হবে। কঠোরতা যেন কোনো ব্যক্তির ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ না করে। পর্যাপ্ত ট্রাইব্যুনাল এবং দক্ষ বিচারক ছাড়া দ্রুত বিচার সম্ভব নয়। তাই ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতা কার্যকর করতে হলে তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও নজরদারি বাড়াতে হবে। বিচারব্যবস্থার দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও দ্রুততার ওপরই নির্ভর করবে এই আইনের সফলতা। আমরা সেই সফলতার দিকেই তাকিয়ে থাকব।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫