
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেক-এর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে দুই নেতার মধ্যে এই বৈঠক হয়, যা প্রায় ৩৫ মিনিট স্থায়ী হয় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বৈঠকটি অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে উভয় পক্ষই খোলামেলা আলোচনা করেছে।”
তিনি আরও জানান, “বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের প্রসঙ্গ এসেছে। ভারতে বসে তিনি যেভাবে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, তিস্তার পানি বণ্টন এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি বৈঠক হলো।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যু
গত বছরের আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণ অনুরোধ জানায়।
ভারত সরকার এই অনুরোধের জবাবে জানায় যে, তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক নোট ভার্বাল পেয়েছে, তবে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে এবং প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় এই ধরনের মামলায় প্রত্যর্পণ সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে।
এই পরিস্থিতিতে, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ইউনূস-মোদি বৈঠককে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান মতপার্থক্য কমিয়ে এনে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।