‘বীজ লাগাইছি আমরা, ধান কি অন্যের ঘরে যাবে?’, বিএনপির ফজলুরের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ২২:২৫

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম পাইলট স্কুল মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী ও জনসভায় ফজলুর রহমান।
ক্ষমতাটা বিএনপির ‘প্রাপ্য’ বলে মনে করেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একের পর এক তেজস্বী বক্তব্য দিয়ে আসা কিশোরগঞ্জের এই নেতা এও দাবি করেছেন, নির্বাচন হলে দুই তৃতীয়াংশ আসনেই জিতবে তার দল।
শনিবার কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম পাইলট স্কুল মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী ও জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন ফজলুর।
১৯৮৬ সালে নৌকা নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে জয় পাওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে বিএনপিতে চলে যাওয়া এই নেতা বলেন, “যারা বলছেন বিএনপি ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে গেছে, তাদের উদ্দেশে বলি, বিএনপি ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে যায়নি, ক্ষমতাটা বিএনপির প্রাপ্য।”
আওয়ামী লীগ মাঠে নেই মন্তব্য করে ফজলুর বলেন, “এখন বিএনপি হলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল। এখন নির্বাচন হলে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সিট পাবে। “ফসলের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করেছে বিএনপি, বীজ লাগাইছি আমরা, নিড়ানি দিছি আমরা, রোগ-বালাই দমন করেছি আমরা, এখন ধান কি অন্যের ঘরে যাবে? তা হতে পারে না।”
রক্তে বোনা এই ‘ধান’ পাওয়ার ন্যায্য অধিকার কেবল বিএনপিরই আছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “জনগণ হচ্ছে দেশের মালিক, ইউনূস সাহেবরা হলেন পাহারাদার।”
দুপুরে সমাবেশ শুরু হলেও সকাল ১০টা থেকে দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মাঠে আসতে থাকেন। ১২টার দিকে পুরো মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “দেশের মালিকদের ঠিক করতে দিন দেশের পাহারাদার কে হবে, কোন দলে হবে।”
সংসদ ভেঙে গেলে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হয় জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ফজলুর বলেন, “আপনারা আট মাস পার করে ফেলেছেন। নানা অজুহাতে, সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করছেন। কখনো বলেন ডিসেম্বরে কখনও বলেন জুনে।
“আমরা হাসিনা সরকারকে বিদায় করেছি নতুন আরেকটি সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর জন্য। কাজেই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। অনির্বাচিতদের হাতে বেশিদিন দেশ থাকতে পারে না। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মালিকদের পছন্দের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রধান চাওয়া।”
‘আওয়ামী লীগের লোকদের নির্যাতন নয়’
আওয়ামী লীগ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে অভিযোগ এনে ফজলুর বলেন, “কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগের মতো চলতে চাই না। আমরা চাই দেশের আইন সঠিকভাবে চলুক। “আমি বলি আওয়ামী লীগের নির্দোষ লোকদের নির্যাতন করা যাবে না। তাদের ওপর অন্যায় আচরণ করা যাবে না।” ৫ আগস্টের পর অনেক অন্যায় হতে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “মাজার ভেঙে ফেলা হচ্ছে, সংস্কৃতি ও গানবাজনায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের মনের খোরাক।
এগুলোকে রক্ষা করতে হবে। “দেশের মানুষ গান শোনে। তারা লালন, হাসনরাজা, রাধারমনের গান শোনে। তাই আমি বলি দেশে ধর্ম থাকবে, বাঙালির সংস্কৃতিও থাকবে। ছেলে মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষা যেমন পাবে, তেমনি স্কুল কলেজেও যাবে। তারা ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে।” পৃথিবীতে বিজ্ঞানকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “বিজ্ঞান থাকবে, ধর্মও থাকবে। এই দুইটা সমান চলবে। তা না হলে পৃথিবীতে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পারব না।”
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত হতে পারলে সেখানে ওয়াজের পাশাপাশি ফুটবল খেলা হবে, সংস্কৃতিচর্চা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার মানে মাকে অস্বীকার
একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ফজলুর রহমান বলেন, “রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হইছে। মায়ের পেট থেকে যেমন বাচ্চা হয়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পেট থেকে বাংলাদেশ হইছে। এখন বাংলাদেশ বা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করলে মাকে অস্বীকার করা হয়।” মাকে যে ছেলে অস্বীকার করে সে ভালো ছেলে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকে যারা অস্বীকার করে তারা ভালো মানুষ না। আপনি যদি মুক্তিযুদ্ধকে না মানেন, আমি আপনাকে রাজাকার বলব।
মুক্তিযুদ্ধকে না মানলে আমি বলব আপনার পূর্বপুরুষ আল বদর ও দালাল ছিল।” “এর জন্য আপনারা আমাকে যত গালাগালিই করেন না কেন, আমি মুক্তিযুদ্ধকে ছাড়তে পারব না। কারণ লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে এদেশকে স্বাধীন করেছি আমরা।” মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো সম্পর্ক নাই মন্তব্য করে একাত্তরের এই বীর বলেন, “এখন হাসিনা ফেইল করেছে, তাই বলে তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ তো ফেইল করেনি। “একটা জাতির মুক্তিযুদ্ধ কখনো ফেইল করে না। যারা এসব বলছে তারা মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করতে চায়, ছোট করতে চায়।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হেসেন মুকুল, সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু, সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. দানাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও এতে বক্তব্য রাখেন।