পহেলা বৈশাখের সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিলো ছায়ানটের শিল্পীরা। সোমবার ভোর ৬:৩০ টায় রমনার বটমূলে শুরু হওয়া এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ছিল প্রাণবন্ত ও সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

এ বছর বর্ষবরণের মূল বার্তা ছিল “আমার মুক্তি আলোয় আলোয়”, যা আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশপ্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয়।

এই উৎসবে অংশ নিতে আসা নাফিজ আহমেদ বলেন, “এটা আমার প্রথম রমনা বটমূলে আসা, এবং এই বছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে খুব ভালো লাগছে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল সংগীত পরিবেশন হচ্ছে, প্রচুর মানুষ একত্রিত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। ভোরবেলা থেকেই এক ভিন্ন আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।”

রমনার বটমূলে অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে গান শোনার সময় সাব্বির হোসেন বলেন, “গত বছর থেকে কিছুটা বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গত কয়েক বছর স্বৈরাচারী শাসন ও দলীয় অসুস্থতার কারণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু এবছর সে তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যে কারণে কিছুটা আতঙ্ক তো রয়েইছে।”

অনুষ্ঠানে চলছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "কেন চেয়ে আছো, গো মা, মুখপানে" গান, যখন দেশকালের নিউজ ডটকমের সাথে কথা বলেন প্রিতম ফকির। তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে আমি নিয়মিত রমনার বটমূলে এসে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উপভোগ করি, কিন্তু এবছর মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, সব মিলিয়ে এবছরের আয়োজন গত বছরের তুলনায় কিছুটা মনমরা মনে হয়েছে।”

এবারের বর্ষবরণ আয়োজনের জন্য রমনার বটমূলে পূর্ব-পশ্চিমে ৭২ ফুট লম্বা এবং ৩০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এবছর মোট ২৪টি পরিবেশনা হবে। এর মধ্যে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক কণ্ঠের গান এবং ৩টি পাঠ। অনুষ্ঠানটি শেষ হয় জাতীয় সংগীত দিয়ে।

এবারের আয়োজনে পুরুষ শিল্পীদের পোশাক মেরুন রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা। নারীদের মেরুন পাড়ের অফ হোয়াইট শাড়ি। এই মেরুন রঙের সঙ্গেই মানানসই রং করা হয়েছে মঞ্চের। প্রতিবছর মঞ্চের আকৃতি একই রকম থাকে, শুধু শিল্পীদের পোশাকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে মঞ্চে রঙের পরিবর্তন করা হয়। গতবারের রং ছিল হালকা সবুজ।