-67fde74e218e1.png)
প্রতীকী ছবি
প্রতি বছর ঈদ যাত্রায় ঝরে যায় অনেক প্রাণ। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে আইন না মানা। রাস্তা পারাপারে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালাতে, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে আইন রয়েছে। কিন্তু হাইওয়েতে নছিমন, করিমন, ভটভটি, আলগামন, আলমসাধু, মোটর ব্যবহৃত অবৈধ ভ্যান-রিকশা এবং মোটরসাইকেলের অপরিকল্পিত ব্যবহার সড়ক দুর্ঘটনা বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা এখনই বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা দরকার।
সড়ক দুর্ঘটনা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে সভ্যতা ও আইন মানা না মানার মাত্রায় দেশভেদে দুর্ঘটনার হার কম বা বেশি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫০-৫৫ ব্যক্তির প্রাণহানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষ নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হয়। ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে, যা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল। সড়ক আইন ২০১৮-তে ১২৬টি ধারা, ৫৮টি সংজ্ঞা এবং ১৪টি নতুন বিধান সংযুক্ত আছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিধানগুলো হচ্ছে- (১) সড়কে গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। (২) সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে বা প্রতিযোগিতা করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। (৩) মোটরযান দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তির গুরুতর আহত বা প্রাণহানি হলে চালকের শাস্তি দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
মজার ব্যাপার হলো, সড়ক আইন ২০১৮-তে তিনটি ধারার অপরাধ ছাড়া সব অপরাধ জামিনযোগ্য। আইনে জরিমানার পরিমাণ বেশি নির্ধারণ করা হলেও জনগণ সচেতন হলে দিতে হয় না। যেমন- হেলমেট পরে গাড়ি চালালে বা ট্রাফিক সংকেত মানলে বা গাড়ির লাইসেন্স করা থাকলে কোনো জরিমানা দিতে হবে না। জরিমানা কম না বেশি সেটা চিন্তা না করে আইন মান্যকারীকে সচেতন নাগরিক হতে হবে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদি ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) প্রযোজ্য হবে। তবে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে চালকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবে এই বিষয়টি পরিবহন ও তদন্তসংশ্লিষ্ট অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। কেননা তারা ভাবছেন গাড়ি দুর্ঘটনা দৈব ঘটনা। এখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান অনেকটা কঠিন শাস্তির বিধান। সেটা থাকলে কেউ গাড়ি চালাবে না এবং যারা গাড়িচালক তারা নিরুৎসাহিত হবে।
আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনটি কোনোভাবেই গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে নয়; বরং যারা আইন মানেন না তাদের জন্য সতর্কতা ও সচেতনতা সৃষ্টির আইন। কারণ ট্রাফিক সংকেত মানতে ও হেলমেট পরে গাড়ি চালাতে হবে- এই বিষয়টি শেখার জন্য যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লাগে না, তেমনি ট্রাফিক সংকেত না মানলে বা হেলমেট না পরলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে- এই বিষয়টি ভয় দেখিয়েও মানানো সম্ভব নয়। দরকার জাতিকে সভ্য হিসেবে গড়ে তোলা। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে ট্রাফিক সংকেত, হেলমেট পরার লাভ কী, উল্টাপথে গাড়ি চালালে কী হয়, অবৈধ পার্কিংয়ের অপকারিতা, গাড়িতে সিটবেল্ট বাঁধলে কী লাভ-ক্ষতি, মদ্যপ ও বেপরোয়া গাড়ি না চালানো, গাড়ি চলাকালে মোবাইল ফোনে কথা না বললে কী উপকারিতা ইত্যাদি সংযুক্ত করা। যাতে করে বাল্যকাল থেকেই ট্রাফিক আইন মানতে শেখে। যথাযথ আইন মানানো বা মেনে চললে দেশের সড়ক দুর্ঘটনা বেশির ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।