Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ চায় পাকিস্তান

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ২১:২৩

বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ চায় পাকিস্তান

ঢাকায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। ছবি- সংগৃহীত

১৫ বছর পরে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় উচ্ছ্বসিত পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত সংলাপে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দুই দেশের বৈঠক নিয়ে শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

এতে বলা হয়, “বৈঠকটি আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে উভয় পক্ষের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিশীলতা বজায় রাখতে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানিক সংলাপ, ঝুলে থাকা চুক্তিগুলোর দ্রুত চূড়ান্তকরণ এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও গভীর সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।”

বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আট মাস পর গত বুধবার ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, যা সাড়ে ১৫ বছর পর প্রথম। এই বৈঠক করতে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আমনা বালুচ।

পাকিস্তানি সচিব আমেনা বালুচ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও দেখা করেছেন, সরকার প্রধানও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বলেছেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরকে হারিয়ে ফেলেছিলাম, সম্পর্ক বরফে জমে গিয়েছিল। এখন সেই বাধা দূর করে এগিয়ে যেতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য জাহাজ যোগাযোগ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের পণ্যে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার শর্তও তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে ‘একাত্তর প্রশ্নটির’ সমাধানের আগ্রহের কথাও বলা হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফপিসিসিআই এর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকও সই করেছে।

দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের আগের সম্পদের হিস্যাও দাবি করেছে। পাকিস্তান এ নিয়ে আলোচনায় আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমনা বালোচ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং কৌশলগত সহযোগিতায় বিস্তৃত আলোচনা হয়, যা যৌথ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য এবং জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।

“নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া এবং জেদ্দায় সাম্প্রতিক উচ্চ পর্যায়ের সংলাপগুলোর জন্য সন্তোষ প্রকাশ করা হয়, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমেনা বালুচ বাংলাদেশ সফরে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যিনি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তাগিদ দিয়েছেন।

পাকিস্তান তার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামূলক সুযোগ প্রদান করেছে, আর বাংলাদেশ মাছের উৎপাদন এবং সামুদ্রিক বিদ্যায় প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, “বাংলাদেশি পক্ষ পাকিস্তানের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ প্রস্তাবকে স্বীকার করেছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছে।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “বৈঠকে যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটিকে অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করে, উভয় পক্ষ করাচি এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি শিপিং চালু করার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তারা ভ্রমণ এবং ভিসা সহজীকরণের ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতির জন্যও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।”

বাংলাদেশ ঢাকায় পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ শিল্পীদের সাম্প্রতিক প্রদর্শনীর প্রশংসা করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, “পাকিস্তান পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য উৎসাহ দিয়েছে।”

ক্রীড়া, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাবনাগুলো নিয়েও আলোচনার কথা জানিয়ে পাকিস্তান লিখেছে, “যার মধ্যে বিভিন্ন স্মারক চুক্তির চূড়ান্তকরণের বিষয়ও ছিল।”

বহুপাক্ষিক বিষয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করার কথাও জানানো হয় বিবৃতিতে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ভারতের জম্মু-কাশ্মীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশকে অবহিত করেছেন বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। এই বিরোধের দ্রুত সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানানোর কথাও বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সময় উভয় পক্ষ ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল, বিশেষত গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কঠোর নিন্দা জানিয়েছে।”

পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী, সিনেটর মোহাম্মদ ইশাক দার বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।

দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে হবে বলেও জানিয়েছে পাকিস্তান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫