Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সংস্কার না করে নির্বাচনে লাভ নেই: স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:৪৩

সংস্কার না করে নির্বাচনে লাভ নেই: স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। ছবি- সংগৃহীত

সংস্কার না করে সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন করলে ‘কোনো লাভ হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ।

রবিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “মূল সংস্কার না করে নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু নির্বাচনের প্রশ্ন আসলে, আগে সংস্কার না করে কোনও নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। সেজন্য আমরা সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়েছি। সংস্কার করার পর করলে কোনও অসুবিধা নেই।”

“বর্তমানে যে স্থানীয় সরকার, আমরা বললেও… এগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকারের কোনো চরিত্র এগুলোর মধ্যে নেই।”

তিনি বলেন, বর্তমান ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সংগঠন ও আইন কাঠোমোতে আমূল পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পাঁচটি আইনে নির্বাচন করা হয়। আমার একটি মাত্র আইনের প্রস্তাব করেছি, একটি আইন দিয়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করা যাবে। এটি একটি মৌলিক সংস্কার।”

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “এখন ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ ও এ ধরনের স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের হাতে অধিকাংশ ক্ষমতা থাকে। সদস্যদের হাতে তেমন ক্ষমতা থাকে না। সেজন্য নির্বাচন থেকে চেয়ারম্যান পথ বাদ দিতে বলেছি। নির্বাচিত সদস্যরা তাদের পরিষদ প্রধান নির্বাচিত করবেন।

প্রয়োজনের ছোট পরিসরের একটি পর্ষদ গঠন হবে। তাহলে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় সব নির্বাচিত প্রতিনিধি ভূমিকা রাখতে পারবেন। এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা যাবে না।”

“২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হিসাব করে দেখা গেছে ২২৫ দিন চলে যায় এই নির্বাচন শেষ করতে। এটা ৪০ দিনে নামিয়ে আনা সম্ভব। এই নির্বাচনে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সেটাও কয়েকগুণ কমে যাবে।”

স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলায় ফৌজদারি ও দেওয়ানি পূর্ণাঙ্গ আদালত স্থাপন করতে হবে। এটা নতুন কিছু নয়, এর চর্চা এক সময় ছিল। গ্রাম আদালতের ‘অপব্যবহার’ হচ্ছে। মানুষ সলিশে ফিরে গেছে।

কমিশনের প্রস্তাব হল- “গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করতে হবে। উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে বিচার চালানোর প্রয়োজন নেই। থানায় সালিশের নামে আদালত বসানো হয়, এটা বন্ধ করতে হবে।”

স্থানীয় সরকারের জনবল নিয়োগ ও বেতনের জন্য একটা নিয়োগবিধি করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সরকার ৭০ ভাগ, স্থানীয় সরকার ৩০ শতাংশ বেতন দেবে। গ্রাম পুলিশ ও টাউন পুলিশ গঠন করতে হবে।”

কমিশনের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করতে বলেছি। সেখানে জেলা পরিষদ নির্বাচন চালু করা দরকার। সেখানে সরকারি কাজে ভ্যাট টেক্স মওকূফ হচ্ছে, এটা বাতিল করতে বলেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান ও কাজী মারুফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরও পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই অধ্যাপকের নেতৃত্বে কাজ করেন সাত সদস্য।

গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় বসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। কমিশনগুলো হলো: সংবিধান সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার।

দ্বিতীয় ধাপে গঠিত পাঁচটি কমিশন হচ্ছে: স্বাস্থ্যখাত সংস্কার, শ্রম সংস্কার, নারী বিষয়ক সংস্কার, স্থানীয় সরকার সংস্কার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

এসব কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথমে ৩১ মার্চ এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।

কমিশনগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা পড়ে ২২ ফেব্রুয়ারি।

এরপর ২২ মার্চ জমা দেওয়া হয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন।

শনিবার নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বাকি রইল স্বাস্থ্য ও শ্রম কমিশনের প্রতিবেদন।

পুলিশ সংস্কার ছাড়া অন্য পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫