Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

চাঁনখারপুল ‘গণহত্যা’: ট্রাইব্যুনালে প্রথম পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:২৮

চাঁনখারপুল ‘গণহত্যা’: ট্রাইব্যুনালে প্রথম পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদেরকে এপিবিএন সদস্যের সরাসরি গুলির এই ভিডিও পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন রাজধানীর চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে, যেটি গত বছরের আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনায় করা অভিযোগের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।

ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদনে অভিযুক্তরা হলেন ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম মো. আকতারুল ইসলাম ও এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম। এদের মধ্যে ৪ জন পলাতক।

তাজুল বলেন, “তদন্ত শুরুর ১৯৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হলো। এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার তদন্ত সম্পন্ন হলো।”

তদন্তে কী পাওয়া গেছে তার সংক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ছয় জনকে হত্যা করেন আসামিরা।”

৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে দালিলিক তথ্য-প্রমাণও সংযুক্ত করা হয়েছে, আছে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দিও।

১৯টি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে ঘটনার। ১১টি পত্রিকার রিপোর্ট রয়েছে। দুটি অডিও কল রয়েছে।

এর মধ্যে একটি অডিও কল রয়েছে হাবিবুর রহমানের। তিনি পুলিশ কমান্ড সেন্টার থেকে ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন বলেও মন্তব্য করেন তাজুল।

“এই নির্দেশের পরই মরণঘাতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন পুলিশ সদস্যরা।”

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “১১টি বই দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনও রয়েছে। আছে ছয় জন শহীদের ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট।”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ব্যাখ্যা করে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, “আজ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

২০২৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস হয়ে উঠে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের।

সরকারি হিসাবে এই আন্দোলনে আট শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং সেই ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এই মামলায় যারা পলাতক আসামি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচারের সময় পলাতক থাকলে তাদের বিষয়ে পত্রিকায় ট্রাইব্যুনাল থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। যদি হাজির না হয় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে। তখন তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মামলা পরিচালনা করবেন।”

‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি শেখ হাসিনার’

চাঁনখানপুলে প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও দাবি করেন তাজুল। বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির’ তদন্ত চলছে। সে জন্য তাদের এই মামলায় আসামি করা হয়নি।

“তবে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনার যে ভূমিকা রয়েছে তার বর্ণনা তদন্ত প্রতিবেদনে রয়েছে।”

চাঁনখারপুল এলাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আরও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “সেসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। সে সব অপরাধের তদন্ত চলছে।

“তদন্ত সম্পন্ন হলেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত সংস্থা। যেহেতু ছয় জনকে হত্যার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রথমেই সম্পন্ন হয়েছে সে জন্য এটিই প্রথমে দাখিল করা হয়েছে।”

২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলীদের আইনজীবী ছিলেন তাজুল ইসলাম। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তাকে চিফ প্রসিকিউটর বা প্রধান কৌঁসুলি করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে।

তাজুল বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাভারের আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে যাব।

“তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন ফাইনাল টাচ চলছে। এটির প্রতিবেদন পেয়ে গেলে চাঁনখারপুল ও আশুলিয়ার ঘটনার বিচার একই সময়ে করা সম্ভব হবে।”




Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫