এটা কেবল শুরু: চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪৮

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি: পিআইডি
চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এটা কেবল শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, তবুও এত দূরে।”
সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সরকার প্রধান বলেন, “আসুন, এ পরিস্থিতি বদলে ফেলি।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা আশা করি আপনি আবারও আমাদের দেখতে আসবেন- আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।”
গত মাসে চীন সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা। ওই সফরে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এবং তাদের বিশাল সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন।
তিনি আশা করেন, আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সাথে একত্রে একটি ‘বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত’ করবেন।
ইউনান প্রদেশের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে চীন সফরের কথা উল্লেখ করে প্রদান উপদেষ্টা বলেন, “এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”
তিনি চীনের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং সম্পর্ক উন্নয়নে উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানান।
গভর্নর ইউবো মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়ে বলেন, “আমার এই সফরের উদ্দেশ্য হলো আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ইউনান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য চীনের উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত।”
প্রধান উপদেষ্টা ও গভর্নর যুব বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
গভর্নর ইউবো জানান, ইউনানে একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যে ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি দুদেশের অভিন্ন সামাজিক লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “চীনে অনেকেই এই পদ্ধতির সুফল পাচ্ছেন।”
তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানো এবং সামুদ্রিক খাবার, আম ও কৃষিপণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন।
“মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগে জোর দিতে হবে এবং আমাদের অঞ্চলগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে,” বলেন ওয়াং ইউবো।
প্রধান উপদেষ্টা গভর্নরের প্রস্তাবগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, “আপনি যা বলেছেন-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য বা প্রশিক্ষণ বিষয়ে-আমরা সবকিছুর সঙ্গে একমত। আমরা এগুলো আগের চেয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।”
বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবাকে মূল অগ্রাধিকারখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশি রোগীদের জন্য কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণসহ চিকিৎসা পর্যটন সেবা চালুর ক্ষেত্রে চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায়।”
উভয় পক্ষ শিক্ষাবিনিময় বাড়ানোর গুরুত্ব নিয়েও একমত হন। বর্তমানে প্রায় চারশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে এবং প্রদান উপদেষ্টা ইউনূস উল্লেখযোগ্য হারে এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
“আমরা আমাদের তরুণদের চীনে পড়াশোনা ও ভাষা শেখায় উৎসাহিত করব,” তিনি বলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।