পথচারী পারাপারে সব জেব্রা ক্রসিংয়ে বসবে ‘সিগন্যাল লাইট’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:০৯

জেব্রা ক্রসিং দিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা
পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করতে রাজধানীর প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে ধাপে ধাপে সিগন্যাল লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই আধুনিক সিস্টেমটি শুধু পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না বরং যান চলাচলের শৃঙ্খলাও ফিরিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার।
বৃহস্পতিবার মিরপুর-২ নম্বরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের বিপরীতে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)’-এর আওতায় পরিচালিত একটি পাইলট প্রকল্প পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএমপির এই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, “বর্তমানে রাজধানীর ২২টি পয়েন্টে এমন সিগন্যাল লাইট বসানোর কাজ করছে ডিএমপি ও সিটি করপোরেশন। ফার্মগেট, সোনারগাঁও ক্রসিং, বাংলামোটর ও শেরাটন ক্রসিংয়ে শিগগিরই সিগন্যাল চালু হবে।”
মো. সরওয়ার বলেন, “আমরা ডিএমপি ও সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ঢাকা শহরের প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে ধাপে ধাপে এই ধরনের সিগন্যাল লাইট চালু করব। পথচারীরা যেন নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।”
“ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটা প্রজেক্ট আছে সেই প্রজেক্টে ফান্ডিং করছে জাইকা। জাইকার সহায়তায় এই প্রজেক্ট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করলেও এটাকে স্থায়ী করে ফেলব।”
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “পথচারী পারাপারের জন্য সিগন্যাল লাইট সিস্টেম চালু করেছি। গত ২০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক কার্যক্রম আগামী ৮মে পর্যন্ত চলবে। আমাদের রিসোর্স আমরা ম্যানেজ করতে পারলে এটাসহ আরও অনেক জায়গায় এই ধরনের পথচারী পারাপারের জন্য সিগন্যাল লাইট প্রজেক্ট চালু করব।”
সিগন্যাল লাইট সিস্টেম কাজ করবে যেভাবে
মো. সরওয়ার বলেন, “সাধারণত সড়কের দুই পাশ দিয়ে যদি এক মিনিটে ২০০ গাড়ি পারাপার হয়, তাহলে এই গাড়ি চলন্ত অবস্থায় একজন বা দুইজন পথচারী পারাপার হলে তাতে গাড়ির ফ্লো বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আমরা পথচারীদের ফুটপাতে কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখব।

“যখন পথচারীদের জন্য সিগন্যাল লাইট অন হবে তখন গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন পথচারীরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাস্তা পার হয়ে যাবেন। এরপর আবার গাড়ি চলাচল শুরু হবে। এর ফলে আমাদের ঢাকার রোড সেফটি যে প্রজেক্ট সেই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে। একদিকে পথচারীরা দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচবে, অপরদিকে আমাদের গাড়ি চলাচল অব্যাহত থাকবে।”
ডিএমপির এই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “এই প্রজেক্টের ফলে গাড়িও সঠিক গতিতে সঠিক সময়ে চলতে পারবে। একটু অপেক্ষা করতে হলেও পথচারীরাও নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারবেন।
নগরবাসীকে সিগন্যাল লাইট মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকাবাসী এই সিগন্যাল লাইট মেনে চললে সবার সুবিধা হবে। সবাই তাড়াতাড়ি যেতে পারবে। আমরা ডিএমপি এবং সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ঢাকা শহরে এই ধরনের যত জেব্রা ক্রসিং আছে, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারীদের জন্য এমন সিগন্যাল লাইট সিস্টেম চালু করব।”
এক প্রশ্নের জবাবে মো. সরওয়ার বলেন, “আমরাই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যারা অ্যাসাইনে আছি, বিভিন্ন সংস্থা আছে তারা ঢাকার সিগন্যাল লাইটগুলো স্থাপনের জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের ২২টা সিগন্যালে দুই সিটি করপোরেশন বুয়েটের সহায়তায় সিগন্যাল লাইট বসাচ্ছে। সেগুলোতেও গাড়ি চলাচলের সিগন্যাল লাইটের পাশাপাশি পথচারীদের জন্য চলাচলের সিগন্যাল লাইটও থাকবে।”
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং পথচারীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করতে বুধবার মিরপুরে চালু করা হয় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের পাইলট প্রকল্প।
জাইকার অর্থায়নে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সহযোগিতায় ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি)’ আওতায় নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়।
রাজধানীতে মোট ২২ পয়েন্টে এমন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি চালুর প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছে ট্রাফিক বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রকল্পটি মিরপুরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান-ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই সিগন্যাল ব্যবস্থার কার্যক্রম চলবে।
পথচারীরা একটি পুশ সুইচ চেপে সিগন্যাল পরিবর্তনের মাধ্যমে রাস্তা পার হতে পারবেন। সবুজ বাতি জ্বলে উঠলেই গাড়িগুলো ৩০ সেকেন্ড থেমে থাকবে, যাতে পথচারীরা নিরাপদে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে পারেন।
এই উদ্যোগ পরীক্ষামূলক হলেও ভবিষ্যতে রাজধানীজুড়ে এমন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার সারওয়ার।