রানা প্লাজা ধস: ‘পর্বতের মূষিক প্রসবে’ হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২১:০৫

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সফিকুল কবির মিলনায়তনে বক্তব্য দিচ্ছেন এম এম আকাশ।
রানা প্লাজা ট্রাজেডি সারাবিশ্বে জাগরণ তৈরি করলেও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করেনি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সফিকুল কবির মিলনায়তনে রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক যুগপূর্তিতে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এম এম আকাশ বলেন, “রানা প্লাজার ঘটনায় পুরো জাতি জেগে উঠেছিলাম। পুরো পৃথিবী জেগে উঠেছিল। ফল কী হয়েছে? পর্বত মূষিক প্রসব করেছে (বিপুল উদ্যোগে তুচ্ছ অর্জন)।”
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে সেখানে থাকা পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ১৬৯ জন পঙ্গু হন।
এখনও সব শ্রমিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতি বছর দুর্ঘটনার বর্ষপূর্তির আয়োজনে অভিযোগ করে থাকেন। এই ঘটনায় এখনও বিচার নিশ্চিত করা যায়নি।
এম এম আকাশ বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “রানা প্লাজাকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্নটি তুলতে পারি, এটি কি দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড?
“রানা প্লাজার ঘটনার পর দেখেছি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একটি তহবিল করেছেন, অনেকে দান করেছেন, কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ছাড়া বাকি ১৪ আসামি জামিনে বের হয়ে গেছেন।”
আসামিদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা ও বিচার হবে কিনা, তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, “শ্রমিক শ্রেণির জীবনের দাম পূঁজিপতির কাছে খুবই কম।”
আকাশ ‘জীবন ধারণের মতো মজুরি চাই’
শ্রমিকদের জীবনধারণের মতো মজুরি নির্ধারণ করা কারখানা মালিকের দায়িত্ব বলে মনে করেন এম এম আকাশ। তিনি বলেন, “কিন্তু আমাদের এখানে মালিক কম, শ্রমিক বেশি, ফলে কম বেতনেই শ্রমিক পাচ্ছে।”
কেবল তৈরি পোশাক নয়, সব উৎপাদন খাতেই শ্রমিকরা ঝুঁকিতে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ওশি ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার তথ্যও তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ৯ হাজার ২৬৩ জন শ্রমিক মারা গেছেন। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে মারা গেছে ১ হাজার ৪২৩ জন। এর মধ্যে এক হাজার ১০৩ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক।”
এসেব সবার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের পরিবার তা পায়নি বলেও মন্তব্য করেন এম এম আকাশ। বলেন, “মানে এমন সেক্টর যেখানে ইচ্ছা করলেই দেওয়া যায় না।”
একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ফ্যাক্টরি সেক্টরে ২০০৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ৮০ ক্ষতিপূরণ মামলা লেবার কোর্টে উঠেছে। এর মধ্যে ৩৫ মামলার ক্ষতিপূরণের রায় হয়েছে। ১৯ মামলায় ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা কিন্তু ১৯ মামলায় গড়ে সময় লেগেছে ২১ মাস।”
অনুষ্ঠানে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর একটি জাতীয় জাগরণ তৈরি হয়েছিল। এটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। রানা প্লাজায় নিহতদের লাশ তাদের মায়েরাও শনাক্ত করতে পারেনি।”
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা বস্তবায়নের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের সহায়তায় শ্রম সংস্কারে ৩১ দফার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। এটি যেন বাস্তবায়ন হয়।”
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, “আমরা সব সময় দায়ী ব্যক্তির সাজার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ও বিচারকার্যে অংশ গ্রহণের সুযোগ তেমনভাবে আলোচিত হয় না।”