প্রতিবন্ধীদের দাবি: ইউনূসের প্রতিশ্রুতির ‘প্রতিফলন নেই’, হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:০৮

প্রতিবন্ধী নাগরিকদের আইনি অধিকার নিশ্চিত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নানা দাবির পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রায় ছয় মাসেও তার প্রতিফলন ‘না দেখে’ হতাশা জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ে কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
শনিবার টিআইবির সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী নাগরিকদের আইনি অধিকার নিশ্চিত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হতাশা প্রকাশ করেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে করুণার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয় যা কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলনে চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণের দাবি তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, বাংলাদেশে স্নাতক পাস করেও চাকরি না পাওয়া প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গত ২ নভেম্বর প্রতিবন্ধীদের জন্য বেশ কিছু দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করা হয়। তিনি দাবিগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর প্রতিফলন দেখছি না।”
সারাদেশের ভবন এবং পরিবহনে প্রতিবন্ধীদের জন্য সহজে প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, এটা শুধু প্রতিবন্ধীদের সমস্যা নয় বরং ষাটোর্ধ্ব প্রায় মানুষের সমস্যা।
লিখিত বক্তব্যে ডিসঅ্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ (ডিআরডাব্লিউ) এর সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি চাকরিতে ক্যাডার সার্ভিসে যে এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার অর্ধেক তৃতীয় লিঙ্গ ও বাকি অর্ধেক শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে।
“তাই আমরা শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
শারীরিক প্রতিবন্ধী নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতের জন্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধন, প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতি আচরণগত পরিবর্তনের স্বার্থে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এর পাল্টে ‘সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ রাখার দাবিও করেন তিনি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজেই প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে উদাসীন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, তার দায়িত্বগুলো সুচারুভাবে পালনের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও সম্পদের অভাব রয়েছে।
জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ কেবল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে রাখা হয় জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, যাতায়াত ও প্রবেশগম্যতা, সামাজিক সুরক্ষা, আইনি সুরক্ষা, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের বিষয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”
কিছু মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ করলেও সার্বিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকারি বরাদ্দ জানার উপায় নেই বলেও জানিয়ে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে বাজেট প্রকাশের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এতে বক্তব্য দেন ডিসঅ্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ সভাপতি মনসুর আহমেদ চৌধুরী, সদস্য সচিব খন্দকার জহুরুল আলম, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাফিসুর রহমান এবং সেন্টার ফর ডিসঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান।