জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার মামলায় আসামি করা হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও পরিচালক সাদাত সোবহান তানভীরকে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালতে গত ২০ এপ্রিল মামলা করেন নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নিয়মিত মামলা হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই মামলায় শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি, ঢাকার সাবেক দুই মেয়র, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, নির্বাচন কমিশনার, আইনজীবীসহ ৪০৭ জনের নাম আছে আসামির তালিকায়।

রবিবার মিরপুর মডেল থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের বিভাগের সাব-ইন্সপেক্টর রফিকুল দেশকাল নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আমির হোসেন আমু, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, তাজুল ইসলাম, হাছান মাহমুদ, কামরুল ইসলাম, ফারুক খান, আসাদুজ্জামান নূর।

জাহিদ মালেক স্বপন, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, নূরে আলম চৌধুরী লিটন, সাবের হোসেন চৌধুরী, লোটাস কামাল, নওফেল চৌধুরী, শাজাহান খান, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ হেলাল, তারানা হালিম, সানজিদা খানম, প্রাণ গোপাল দত্ত, নিক্সন চৌধুরী, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, শামীম ওসমানকেও আসামি করা হয়েছে।

সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, কাজী নাবিল আহমেদ, এ কে আজাদ, তারেক সিদ্দিকী, তৌফিক এলাহী, গওহর রিজভী, মশিউর রহমানের নামও আছে আসামির তালিকায়।

মামলায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, অভিনেতা ইরেশ যাকের, সাবেক বিচারপতি শামসুজ্জামান মানিককেও আসামি করা হয়েছে।

যেসব সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন: ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শাবান মাহমুদ, আরিফ হাসান, মোজাম্মেল হক বাবু, নাইমূল ইসলাম খান, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, নঈম নিজাম, সুভাষ সিংহ রায়, শ্যামল দত্ত, ফারজানা রুপা, মুন্নী সাহা, জ. ই. মামুন, শাকিল আহমেদ, মিথিলা ফারজানা, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, হারুন উর রশীদ, নাসিরুদ্দীন সাথী, নবনীতা চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ওমর ফারুক, শফিকুর রহমান, ফরিদা পারভীন, মাসুদা ভাট্টি।

আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন- সৈয়দ রেজাউর রহমান, নজিবুল উল্যাহ হিরু, দুদকের সাবেক দুই প্রসিকিউটর খুরশীদ আলম খান ও মোশাররফ হোসেন কাজল।

সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়ালও আছেন আসামির তালিকায়।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক দুই সদস্য মোহাম্মদ সাদিক, হেলাল উদ্দিন আহমদকেও আসামি করা হয়েছে।

৪ আগস্ট দুপুরে মিরপুরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিএনপির কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ (২১) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকেই বিভিন্ন স্লোগান দিতেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত পতনের লক্ষ্যে বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রজনতার মিছিল মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স ও মিরপুর মডেল থানার মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আসামিদের নির্দেশে তাদের দলীয় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী একত্র হয়ে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, রাইফেল, শটগান, পিস্তলের গুলি বর্ষণ করে এবং ককটেল ও হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বলেও লেখা হয় মামলায়।

এ সময় আসামিদের গুলিতে শ্রাবণ গুলিবিদ্ধ হলে তাকে মিরপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।