Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: আল জাজিরাকে ইউনূস

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:০০

আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: আল জাজিরাকে ইউনূস

আল জাজিরার অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি- সংগৃহীত

আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমা নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর। যদি বেশিরভাগ সংখ্যক সংস্কারের পক্ষে একমত হয়, তাহলে সময় বেশি লাগবে। যদি আমরা স্বল্প সংস্কারের দিকে যাই, তাহলে ডিসেম্বরেও নির্বাচন হতে পারে। তবে সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব। কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না।”

রবিবার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পাবে কি না—এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, “বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। যখন এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসবে, তখন নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও সামনে আসবে। অন্যান্য অনেক দল বলতেও পারে যে এই আইনের অধীনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না, ইত্যাদি।”

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনিও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ হয়ে গেছে কি না—জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও তাদের জন্য একটি ভালো সমাধান। তারা বলছে না যে-অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলে যাক, আজই নির্বাচন হোক। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে মানুষজন বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করো।”

ভারতে আশ্রয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং নিজেকে এখনও ‘আইনসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করার বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে—জানতে চান উপস্থাপক। এসময় প্রধান উপদেষ্টা ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন।

তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, যদি ভারত শেখ হাসিনাকে রাখতে চায়, তাহলে সম্ভবত এই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পারব না। কিন্তু তিনি সেখানে থাকাকালীন কথা বলা উচিত না। কারণ, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি করছে।”

ইউনূস বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের মানুষকে উসকানি দিতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এর ফলে আমাদের ভুগতে হচ্ছে।”

হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মোদীর প্রতিক্রিয়া কী ছিল- জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “যদি আমি ঠিকঠাক স্মরণ করে থাকি, তিনি বলেছিলেন যে ভারত এমন দেশ যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।”

ভারত কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছে, বাংলাদেশে কি তিনি বিচারের মুখোমুখি হবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছি যাতে তারা তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। এখনও তারা কোনো সাড়া দেয়নি, কিন্তু যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং আদালত নোটিশ পাঠাবে...'

এই পর্যায়ে উপস্থাপক বলেন, 'তাহলে আপনি বলছেন যে মোদি আপনাকে বলেছেন ভারতের মতো দেশে—যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করার অভিযোগ আছে—সেখানে তারা তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কিছু করতে পারবে না এবং আপনাকে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি যে তাকে (শেখ হাসিনা) বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরত পাঠানো হবে?'

উত্তরে ড. ইউনুস বলেন, “না।”

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। আমরা বুঝতে পারি যে তাদের আইনি পরিস্থিতি কী, আমাদের আইনি পরিস্থিতি কী। আমরা আদালতের আইনি নোটিশের জন্য অপেক্ষা করছি।”

ড. ইউনূস কি ভারতের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে চীন সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কি না এবং তিনি এর মাধ্যমে কোনো বার্তা দিচ্ছেন কি না—জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি সেখানেই যাচ্ছেন যেখানে তিনি যেতে চান।

ড. ইউনূস বলেন, “আমি ভারতে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। তাই চীনে গিয়েছি এবং এখন মালয়েশিয়া যাব।”

তিনি বলেন, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, তার সরকারের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে খুব ভালো, শক্তিশালী ও উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখেন কি না বা বেইজিং ও ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কি না—জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “এটা বেছে নেওয়ার বিষয় না, তারা সবাই আমাদের বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র ভালো বন্ধু, চীন ভালো বন্ধু, ভারত ভালো বন্ধু।”

পাচার হওয়া বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পেতে বিদেশি সরকারগুলো বাংলাদেশকে সহায়তা করছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

ইউনূসকে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন-“বাংলাদেশের সাব-কন্ট্রাক্টেড কারখানাগুলোতে এখনও ব্যাপক শ্রমিক নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। যদিও আপনার ক্ষুদ্রঋণের দীর্ঘদিনের কাজের অবদান রয়েছে। আপনি সমালোচকদের কী উত্তর দেবেন যারা বলেন যে ক্ষুদ্রঋণ কিছুটা সাহায্য করলেও বৈষম্য ও দারিদ্র্যের গভীর সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেনি?”

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ সবকিছুর সমাধান নয়। আমরা বলছি মানুষ যেন নিজের জীবন নিজে গড়তে পারে, অন্যের জন্য কাজ করতে না হয়। এটাই আমার কাজের মূল থিম — মানুষ জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা।

কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা আমাদের উদ্যোক্তা হতে দেয় না। ব্যবস্থা আপনাকে থামিয়ে দেয়, কারণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে কাজ করে না। তারা যাদের প্রচুর টাকা আছে তাদেরকেই ঋণ দেয়, যাদের টাকা নেই তাদেরকে ঋণ দেয় না।

শ্রমিক ইস্যু একটি ভিন্ন বিষয়। হ্যাঁ, আমাদের জনগোষ্ঠীর শ্রমিক খাতে সমস্যা আছে। আমরা সেই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি বলেন, “আমরা আইএলও কনভেনশনগুলোতে স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যায়। আমরা অনেক সমস্যা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি, তবে আমাদের সরকার নিশ্চিত করছে যে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মান অনুযায়ী কাজ করি। এটাই আমাদের অঙ্গীকার এবং আমরা এ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছি।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫