‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৪২

গৃহযুদ্ধে জর্জর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পাঠাতে ‘মানবিক করিডোর’ তৈরি করতে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনার পর সরকার ‘নীতিগতভাবে একমত’ বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন যে বক্তব্য রেখেছেন, তার বিপরীত কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।”
বিশ্বের বড় কোনো শক্তি এই করিডোরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে, সেগুলো ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডা’ বলে তিনি দাবি করেন শফিকুল।
তিনি বলেন, “বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে একের পর এক বিদ্বেষপূর্ণ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে আমরা দেখেছি, যা এখনো চলছে। এ ধরনের প্রচারণাও তার ব্যতিক্রম নয়।”
দুদিন আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তার মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, "এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য করিডর) একটা হবে “
বাংলাদেশের কিছু শর্ত রয়েছে জানালেও সেগুলো প্রকাশ করতে রাজি নন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”
রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে করিডোরে বাংলাদেশ রাজি বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যের পর নানামুখি আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে।
বাসস লিখেছে, রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকটের বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেছেন, দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।
তিনি বলেন, “এছাড়াও, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মানবিক করিডোর দেওয়া নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আর যুদ্ধ দেখতে চাই না।”
সোমবার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এক আলোচনায় তিনি আরও বলেন, 'আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন হিউম্যানিটিরিয়ান প্যাসেজ নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।'
সরকারের অবস্থান তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।”
রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর পক্ষে অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।”