Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অধিকার আদায়ে শ্রম আইন

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৯

অধিকার আদায়ে শ্রম আইন

প্রতীকী ছবি

শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং শ্রম ও নিয়োগ সম্পর্কিত সম্পর্ককে সুস্পষ্ট করতে শ্রম আইন করা হয়। এই আইন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদান করে। শ্রম আইন শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে, যা শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে। মূলত শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ রাখাই হচ্ছে এই আইনের মূল উদ্দেশ্য। 

শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের সদস্যদের বেতন বাড়ানোর জন্য নিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে থাকে। এই শ্রম অধিকার দ্বারা শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অবশ্য সেখানে শ্রমিকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। শ্রম আইন ছাড়াও ১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম লাভ এবং কর্ম অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। ঘোষণাপত্রের ধারা ২৩-এ তা বলা হয়।

কর্মক্ষেত্রে উন্নতি ও তাদের সুযোগ-সুবিধার সমতা বিধান করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী ১৯১৯ সালের ১১ এপ্রিল আন্তর্জাতিক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ১৯৭২ সালের ২২ জুন থেকে বাংলাদেশ আইএলওর সক্রিয় সদস্য। সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সংস্থাটির ১০টি মৌলিক কনভেনশনের মধ্যে আটটি এবং চারটি গভর্নেন্স কনভেনশনের মধ্যে দুটিসহ ৩৬টি আইএলও কনভেনশন এবং একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকার এবং শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আইএলও ডিসেন্ট ওয়ার্ক কান্ট্রি প্রোগ্রাম (ডিডব্লিউসিপি) এর মাধ্যমে উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ তৈরিতে যৌথভাবে কাজ করছে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমজীবীর সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪-তে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে, কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশগুলোকে সব ধরনের শোষণ থেকে মুক্তি দান করা। সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা ও জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। 

সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) সব ধরনের জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনোভাবে লঙ্ঘিত হলে তা আইনত দ-নীয় অপরাধ।’ 

শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’ প্রণীত হয়। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর পঞ্চম অধ্যায় ধারা (৫১-৬০) এই শ্রমিকের স্বাস্থ্য রক্ষার বিধানের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বর্জ্য পদার্থ অপসারণ, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও পায়খানা ও প্রস্রাবখানা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ষষ্ঠ অধ্যায় ধারা (৬১-৭৮) এই শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের কথা আলোচনা করা হয়েছে। অবাঞ্ছিত দুর্ঘটনাজনিত কারণে যাতে কোনো শ্রমিকের প্রাণহানি না ঘটে, এতে তার কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর অষ্টম অধ্যায় ধারা (৮৯-৯৯) এই শ্রমিকের কল্যাণমূলক ব্যবস্থার কথা আলোকপাত করা হয়েছে। যাতে কর্মপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা, পর্যাপ্ত আলাদা গোসলখানা, ক্যান্টিন, বিশ্রাম কক্ষ ও শিশু কক্ষ রাখার পাশাপাশি চা-বাগান শ্রমিকদের জন্য বিনোদন, শিক্ষা ও গৃহায়ণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর নবম অধ্যায় ধারায় (১০০-১১৯) দৈনিক কর্মঘণ্টা ও বিশ্রাম, সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ও সাপ্তাহিক ছুটি বা ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি, মহিলা শ্রমিকের জন্য কর্মঘণ্টা ও সড়ক পরিবহনে নিয়োজিত শ্রমিকের জন্য বয়সের সীমা নির্ধারণসহ উৎসব ছুটির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর দ্বাদশ অধ্যায় ধারা (১৫০-১৭৪) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। কেননা এতে শ্রমিকের দুর্ঘটনাজনিত কারণে জখমের জন্য ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে। এতে ক্ষতিপূরণের জন্য মালিকের দায়িত্ব, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ, ক্ষতিপূরণ বণ্টন এমনকি মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্পর্কে মালিকের কাছ থেকে বিবৃতি তলবের ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

একটি সুন্দর ও সাম্য সমাজ গঠনে সবার উচিত শ্রমিককে তার পাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া। কেননা তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়েই গড়ে উঠছে আকাশচুম্বী ইমারতসহ অনেক স্থাপনা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫