Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সংস্কার কমিশন: সম্বোধনে ‘তুই-তুমি’ শব্দের ব্যবহার নয়

Icon

নিশাত বিজয়

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১০:৫৬

সংস্কার কমিশন: সম্বোধনে ‘তুই-তুমি’ শব্দের ব্যবহার নয়

সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সাথে ড. মোহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে শ্রমজীবীদের সম্বোধনে অমর্যাদাকর শব্দের ব্যবহারের প্রবণতা আছে। শ্রম সংস্কার বিষয়ে গঠিত কমিশন এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ চায়। শ্রমিকের মর্যাদাকর ও হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্মক্ষেত্রে ‘তুই ও তুমি’ শব্দের ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করেছে শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশন। লিঙ্গীয় বিভেদ দূরীকরণে ‘মহিলা’ শব্দের বদলে নারী ব্যবহারেরও পক্ষে তারা।

২০ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে এ কথা লেখা আছে। এর মধ্যে ‘মর্যাদাপূর্ণ-হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ’ নিশ্চিত করতে যেসব কথা লেখা হয়, তা হলো, “মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রেণি, লিঙ্গ, বর্ণ, জাতিভেদে ‘অবমাননাকর ও অমর্যাদাকর ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভাষার’ ব্যবহার রোধ করা, শ্রম আইনে ‘মহিলা’ শব্দের পরিবর্তে ‘নারী’ ব্যবহার করা, শ্রেণি ক্ষমতায় ‘তুই’, ‘তুমি’ সম্বোধন চর্চা বন্ধ করা।”

‘তুই-তুমি’ শব্দের ব্যবহার বন্ধে সুপারিশের বিষয়ে শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘শ্রমিকের সঙ্গে নিয়োগকর্তার সম্পর্ক নিপীড়নের না হয়ে যেন গণতান্ত্রিক ও মর্যাদাপূর্ণ হয়, সে জন্য এ প্রস্তাব করা হয়েছে; আমরা চাই আমাদের দেশের কর্মপরিবেশ যেন শ্রমিকবান্ধব করে তোলা যায়, শ্রমিকের ওপরে আধিপত্য বিস্তার রোধ করা যায়।’

এই সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রিকশা-ভ্যান-শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা হাসান আহমেদ বলেন, ‘আমরা শ্রমজীবী, তাই বলে আমাদের সম্মান নেই, বিষয়টি এ রকম না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও তুই তুকারি করে, যেটা নিয়ে বয়স্ক চালকরা বিব্রত হন। কিন্তু আমাদের বলার কিছু থাকে না।’

আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলনের কথাও বলা হয় এতে। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পর্যন্ত সব জায়গায় এই ভাষা প্রচলনের সুপারিশও করা হয়েছে। দেশের আট কোটি শ্রমিকের মধ্যে সাত কোটি শ্রমিকেরই কোনো আইনি অধিকার নেই বলে সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহভিত্তিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শ্রম আইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদও দেওয়া হয়। এই লক্ষ্যে কাজের স্বীকৃতি ও পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ ও আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর ও শোভন কর্মপরিবেশ, চাকরির অপ্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, অস্থায়ী ও এজেন্সি নির্ভর নিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়। 

এত বেশি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষার বাইরে থাকার বিষয়ে জাতীয় রিকশা-ভ্যান-শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা হাসান আহমেদ বলেন, ‘আমরা মারধর খেলেও কার কাছে অভিযোগ জানাব, সেই সুযোগও নেই। এটা আসলে (আইনি সুরক্ষা) হবে, সেটা আমাদের বিশ্বাসও হয় না।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন সময় আন্দোলনে গিয়ে মামলার আসামি হওয়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশও করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। 

তাদের সুপারিশগুলো নিয়ে সরকার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে পারে। কারণ শ্রমবিষয়ক কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা থাকা জরুরি।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় এসে অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবর মাসে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে প্রথমে ছয়টি কমিশন গঠন করে। পরের মাসে আরো পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়, যার একটি শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তার নেতৃত্বে কাজ করেছে ১০ সদস্যের একটি কমিটি, যাদের কাজ ছিল শ্রম খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সুপারিশ প্রণয়ন করা।

‘শ্রম জগতের রূপরেখা-রূপান্তর : শ্রমিক অধিকার-সুসমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শিরোনামে ৪৫৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মোট ২৫টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকের জন্য মানসম্মত মজুরি, তার আইনি সুরক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিপূরণসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে।

জবাবদিহিমূলক শ্রম প্রশাসনব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। এর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে অবিলম্বে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জাতীয় সামাজিক সংলাপ ফোরাম’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় মজুরি তিন বছর পর পর মূল্যায়ন করার সুপারিশও করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারের নিশ্চয়তা ছাড়াও প্রত্যেকেরই অবসর, কর্ম অক্ষমতা, অসুস্থতা, মাতৃত্বকালীন বা যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আইএলও কনভেনশনে শ্রমিকদের অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার সুপারিশও করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ট্রেড ইউনিয়ন শর্ত শিথিল করে সংগঠন করার অধিকার বিস্তৃত করতে দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫