আকাশে ওড়ার অদম্য ইচ্ছা আর স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। একসময় বড় ঘুড়ি আর বেলুন নিয়ে আকাশে উড়তে চেয়েছেন। কিন্তু এর কোনো কিছুতেই সফল হতে পারেননি। পরে ইউটিউব থেকে জানতে পারেন প্যারাগ্লাইডারের মাধ্যমে আকাশে ওড়ার কথা। সেখান থেকেই শুরু। ইউটিউব দেখে দেখে আর স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে বানিয়ে ফেলেন প্যারাগ্লাইডার। শুরুতে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু প্যারাগ্লাইডার সফলভাবে আকাশে ওড়ানোর পর তার পরিবার এবং এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

মারুফ মোল্লা ফরিদপুর জেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চর বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজাহার মোল্লার ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মারুফ ছোট। ২০২২ সালে বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা আর বেশি এগোয়নি তার। বর্তমানে এলাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করছেন এই তরুণ। পাশাপাশি চলতে থাকে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টাও। অবশেষে ২৩ এপ্রিল বিকেলে উপজেলার চর বিষ্ণুপুরের খেজুরতলার ফাঁকা ফসলি জমিতে মারুফ মোল্লা তার তৈরি প্যারাগ্লাইডারের সফল উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন।

প্যারাগ্লাইডার তৈরিতে মারুফ ব্যবহার করেছেন ইয়ামাহা ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন, কার্বন ফাইবার ৪২ ইঞ্চি পাখা, (চীন থেকে আমদানীকৃত) প্যারাগ্লাইডার, স্টিলের পাইপ, রশি ও সেফটি বেল্ট। প্যারাগ্লাইডারের ওজন পাঁচ কেজি, ব্যাকপ্যাক প্যারাগ্লাইডারের ওজন ২৫ কেজি। সবমিলিয়ে ওজন ৩০ কেজি। প্যারাগ্লাইডারে ৪-৫ মিনিটের মতো প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ফুট উচ্চতায় ওড়েন মারুফ মোল্লা।

মারুফ বলেন, নিজ হাতে তৈরি করা প্যারাগ্লাইডারে আকাশে উড়ে স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। বিদেশ থেকে প্যারাগ্লাইডার আনতে প্রায় ৮-৯ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এটি তৈরিতে আমার খরচ হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকার মতো। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আরো বড় আকারের প্যারাগ্লাইডার তৈরি করে বাজারজাত করতে পারব। এ ছাড়া আমি এয়ার কুলার ও ইলেকট্রিক্যাল থেরাপি মেশিন তৈরি করেছি, যা হাত-পা ঘামানোর সমস্যার সমাধান দিতে সাহায্য করে। তবে এসব নিয়ে আরো গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের বানানো এসব যন্ত্র তিনি বাজারজাত করতে চান।