Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

জাতীয় নারী কমিশন: ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত নিলে সরকারকে ছাড় নয়, হেফাজতের হুঁশিয়ারি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫, ১৮:২৯

জাতীয় নারী কমিশন: ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত নিলে সরকারকে ছাড় নয়, হেফাজতের হুঁশিয়ারি

শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি অংশ নেন সংগঠনের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তার একটি লিখিত বক্তব্য সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো হয়।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি ‘কোরআনবিরোধী’ বলে দাবি করে সরকারকে হুঁশিয়ার করে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বলেছে, সরকার কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নিলে তারা ছাড় দেবে না।

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত মহাসমাবেশে সংগঠনটির আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলা হয়।

২০১৩ সালে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরে মামলা প্রত্যাহারসহ নানা দাবিতে সারা দেশ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে আসে। তবে বক্তাদের বক্তব্যে প্রাধান্য প্রায় নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গটি।

হেফাজত আমিরের বক্তব্যে লেখা হয়, “অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এনজিওবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এমন কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায়। এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেব না।”

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে এতে বলা হয়, “কমিশন ও ‘কোরআনবিরোধী’ প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার আলেম-ওলামার পরামর্শ নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করুন।”

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদেরকে ‘সাম্রাজ্যবাদের ফান্ডখোর’, ‘কুখ্যাত নারীবাদী’ ইত্যাদি পরিচয়ে সম্বোধন করা হয় হেফাজত আমিরের বক্তব্যে। এতে বলা হয়, “তারা এদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিধি-বিধান, ঐতিহ্য ও পরিবার কাঠামো ধ্বংস করার পশ্চাত্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে।”

গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সুপারিশ পেয়ে সরকার প্রধান বলেন, তারা সারা বিশ্বের কাছে নারী বিষয়ে উদাহরণ তৈরি করতে চান।

এতে নারীর নিরাপত্তা, তার বিকাশ, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে মোট ১৭টি অধ্যায়ে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোর বিরোধিতা করছে হেফাজত।

কমিশন উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে বলেছে, সব ধর্মের মানুষদের জন্য অভিন্ন বিবাহ আইন করতে বলেছে, যৌনকর্মীদের পেশার স্বীকৃতি দিয়ে শ্রম আইনে তাদের অন্তর্ভুক্তি চেয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা নারী উন্নয়ন নীতির খসড়াতেও উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকারের কথা বলা ছিল। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এর পক্ষে বলেছিলেন।

বর্তমানে মুসলিম পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে মেয়ে সন্তান ছেলে সন্তানের অর্ধেক সম্পত্তি পায়। একে সমান সমান করার প্রস্তাবের বিরোধিতায় ২০১০ সালে চট্টগ্রামে জন্ম হয় হেফাজতে ইসলামের। তারা নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতায় মাঠে নেমে একের পর এক কর্মসূচি দিতে থাকে।

আরও নানা সংগঠনের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত পিছু হটে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালে করা নারী উন্নয়ন নীতিমালায় উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিধানে কোনো পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়নি।

নারীদের সমানাধিকার নয়, হেফাজত ‘ন্যায্য অধিকার’ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন সংগঠনের আমির।

তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দেশের যৌতুকপ্রথা বন্ধে কঠোর আইন করুন। শিক্ষা ও কর্ম ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়েও আপত্তি

নারী সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ নিয়েও আপত্তি জানানো হয় হেফাজতের এই সমাবেশে।

মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বক্তব্যে লেখা হয়, “গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও সাইবার সিকিউরিটি আইন থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে, এটি আরেক গভীর ষড়যন্ত্র।”

সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু— কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার অন্য কারও নেই বলে মন্তব্য করে এতে লেখা হয়, “তাই ধর্ম অবমাননার শাস্তির আইনি ধারাগুলো বহাল রেখে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওই নির্দিষ্ট সুপারিশগুলো বাদ দিতে হবে।

“শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর নামে কটূক্তি বা বিষোদ্‌গার বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে।”

‘মুক্তমনা’ চর্চার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বন্ধের আহ্বানও জানান মহিব্বুল্লাহ। তিনি লেখেন, “৫ আগস্টের বিজয়কে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে। এমন একটি ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান ও সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে এই বাংলাদেশের মাটিতে আর কখনও কোনো ‘ফ্যাসিস্ট’ স্বৈরাচারের জন্ম না হয়।

“আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্ম পালনের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। নাস্তিকতা ও মুক্তমনা চর্চার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। সংখ্যালঘুদের রাজনীতির বলির পাঁঠা বানানো যাবে না।”

দেশে ‘ন্যায়ের শাসন’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বক্তব্যে বলা হয়, “এমন একটি বিভেদমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে কাউকে গুম-খুন, জেল-জুলুম ও পুলিশি নির্যাতন করা হবে না।”

গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’ ও ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দালালদের’ও বিচার করার ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশে।

হেফাজত আমির বলেন, “আমরা এ দেশে ন্যায়বিচার ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

মানবিক করিডোরে যুদ্ধক্ষেত্র হবে দেশ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পাঠাতে ‘মানবিক করিডোর’ গঠনে সরকারের নীতিগতভাবে সম্মতির বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন হেফাজত আমির। তার শঙ্কা, এই পদক্ষেপে দেশ যুদ্ধক্ষেত্র হবে।

মুহিব্বুল্লাহ বলেন, “দেশ এখন বহুমুখী সংকটে। সেইসঙ্গে ‘আগ্রাসী’ ভারতের ষড়যন্ত্রও থেমে নেই। উপরন্তু, ‘মানবিক করিডোরের’ নামে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ভূরাজনৈতিক লড়াইয়ের স্বার্থে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র বানাতে পরিকল্পনা করে যাচ্ছে।

“এমতাবস্থায় আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সংকট মোকাবিলায় আমাদের জুলাই-আগস্টের মতো ইস্পাত-কঠিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি আবারও গড়ে তুলতে হবে।”

হেফাজতে ইসলাম, নারী কমিশন, অন্তর্বর্তী সরকার, সরকারকে হুঁশিয়ারি, সম্পত্তিতে সমানাধিকার, যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি, 


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫