
রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব’ শীর্ষক এক আলোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান নতুন করে লেখার বিষয়ে যে দাবি উঠেছে, সেটি করতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।রবিবার রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় সংসদ সংবিধান প্রণয়ন করে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে, এমনও ধারণা আছে, ৮-৯ বছর লেগেছে। সুতরাং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে বহুদিন লাগতে পারে।”
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারে নাগরিক উদ্যোগ ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ এই আয়োজন করে, যেখানে বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন।
১৯৭২-এর সংবিধান অব্যাহত থাকবে কি না, এমন প্রশ্ন তুলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সামনে যে সংসদ থাকবে, সে সংসদ সংবিধান পরিচালক হিসেবে কাজ করবে। ৭২-এর সংবিধানের প্রয়োজনে তারা সংশোধন করবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে। তাদের ভাষ্য, ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোতেই ‘ফ্যাসিবাদী উপকরণ’ রয়েছে।
নতুন সংবিধান রচনার জন্য দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “গণপরিষদ যখন কাজ করবে তারা নতুন সংবিধানের কাজ করতে থাকবে। ওটা করতে আমার ধারণা ২-৩ বছর লাগতে পারে। এই ২-৩ বছর কি আমি ৭২-এর সংবিধান গ্রহণ করব?
“এই ২-৩ বছরের জন্য সংসদের কিছু মৌলিক বিষয় যেমন- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, অনুচ্ছেদ ৭০ (দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংসদ সদস্যপদ চলে যাওয়া), উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা—এই মৌলিক জিনিসগুলো জাতীয় সংসদ পরিবর্তন করতে থাকবে।”
জুলাই আন্দোলনের সনদ ঘোষণা এবং সেটি সংবিধানে যুক্ত করার যে দাবি এনসিপি তুলছে, তা নিয়েও কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা ধরেই নিয়েছি, সবাই ‘জুলাই সনদের’ ওপর অনেক কিছুতে একমত হবে না। হয়ত এমনও হতে পারে জুলাই সনদের মৌলিক কিছু জিনিস রাখা যেতে পারে।”
সংবিধানের খসড়ায় ‘জুলাই সনদ’-কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “সেখানে উচ্চকক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন নতুন কমিশনের প্রস্তাব এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও ক্ষমতা নির্ধারণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
সব প্রশ্নের উত্তর সংবিধানে থাকে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “সুশাসনের জন্য ছোট ছোট আইনেরও প্রয়োজন রয়েছে।”
একজনের সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারার প্রস্তাব দিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি নিয়েও কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এটা জনপ্রিয় দাবি। আমারও দাবি। প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদে বললে তো হবে না, আপনাকে কনভিন্সিং তর্ক করতে হবে। পৃথিবীর আর কোন কোন দেশে এটা আছে বের করেন। প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদ কোথাও নাই আসলে।
“ভারত বলেন, যুক্তরাজ্য বলেন কোথাও নাই। দুই মেয়াদ সমাধান না। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাটা কমিয়ে নেওয়া।”
সংসদের উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে নিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধান বিচারপতির অসীম ক্ষমতা, তিনি দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি।”
এই আয়োজনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও বক্তব্য রাখেন।