Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আমফানে লণ্ডভণ্ড যশোর

Icon

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ মে ২০২০, ২২:১৩

আমফানে লণ্ডভণ্ড যশোর

ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে যশোর জেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। মৃত্যুর পাশাপাশি সব সেক্টরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। চৌগাছায় মা-মেয়েসহ তিন উপজেলায় ৬ জন নিহত, চার উপজেলায় ৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন। সেই সাথে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫শ’ কাঁচাঘর বাড়ি , ১১৫ একর জমির ফসল, ২ হাজার ৮৫০ গৃহপালিত পশুপাখি, বৈদ্যুতিক লাইন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা পরিষদের ১৭৬টি গাছ ভেঙ্গে পড়েছে।

একারণে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকার পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

যশোরের আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আমফান ১৬৭ কিলোমিটার বেগে যশোর জেলায় আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের  আঘাতে জেলার বিভিন্নস্থানে গাছের ডাল, বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ কাঁচা ঘর বাড়ি লণ্ডভণ্ড, ১১৫ একর জমির ফসল, ২ হাজার ৮৫০ গৃহপালিত পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যশোর জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, অভয়নগর উপজেলায় ৭ হাজার ৫শ’ কাঁচাঘর বাড়ি, ১০ একর জমির ফসল ও ২শ’ গৃহ পালিত পশু পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বাঘারপাড়ায় দরাজহাট বুদোপুর গ্রামের ছাত্তার মোল্ল্যার স্ত্রী ডলি খাতুন (৪৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। সেই সাথে এই উপজেলায় ৫ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, ১২ একর জমির ফসল ও ২৫০টি গৃহপালিত পশুপাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চৌগাছায় ঘূর্ণিঝড়ে একই পরিবারের ২ ব্যক্তি নিহত ও একজন আহত হয়েছে।


এরা হলেন চৌগাছা পৌরসভা এলাকায় ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম (৪৫) ও মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৩)। ওয়াজেদ হোসেনের ছেলে আলামিন (২২) আহত হয়েছে। এর পাশাপাশি ২৫ হাজার  কাচা ঘরবাড়ি, ১৫ এক জমির ফসল ৩শ’ গৃহপালিত পশু পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শার্শায় ৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- শার্শার গোগা ইউনিয়নের শাহাজানের স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০), বাগআঁচড়ার জামতলার আব্দুল গফুর পলাশের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫) ও শার্শার মালোপাড়ার সুশীল বিশ্বাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস।

এ উপজেলার ভবেরবেড় বেনাপোলে সিঁড়ির ঘরের ইট ধসে পড়ায় সাহেব আলীর ছেলে শাহীন হোসেন (২৫) আহত হয়েছে। পাশাপাশি ৩ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, ১২ একর জমির ফসল, ৪শ গৃহপালিত পশুপাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝিকরগাছায় ২৩ হাজার কাচা ঘর বাড়ি, ১০ একর জমির ফসল, ২শ গৃহপালিত পশু পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেশবপুরে ২০ হাজার কাচা ঘর বাড়ি, ১৫ একর জমির ফসল, ৩শ গৃহপালিত পশু পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সদর উপজেলায় ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় চাপা পড়ে ৩ জন আহত হয়েছেন।


আহতরা হলেন- সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের সালামত বিশ্বাসের ছেলে নুর মুহাম্মদ (৬০) স্ত্রী রাশেদা বেগম (৫০) ও মেয়ে নার্গিস আক্তার (৩০)। সেই সাথে ৩০ হাজার কাচা ঘর বাড়ি, ১৬ একর জমির ফসল, ৫শ গৃহপালিত পশু পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মণিরামপুরে ২৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, ২৫ একর জমির ফসল ৭শ’ গৃহপালিত পশু পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যশোরের বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে পুরো জেলার বেশির ভাগ স্থানে বড় বড় গাছ ভেঙে বৈদ্যুতিক তারের উপর পড়ায় তার ছিঁড়ে যায়। সেই সাথে বৈদ্যুতিক খাম্বাও পড়ে যায়। এ কারণে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পুরো জেলায় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ ছিলো।

এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত  বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা লাইন মেরামতের জন্য কাজ করেছে। শহর ও শহরতলীর কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা গেলেও বেশির ভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিলো। পর্যায়ক্রমে সেগুলো মেরামত করা হবে। তবে মেরামতের পরে বলা যাবে বিদ্যুতের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।


এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এনডিসি প্রিতম সাহা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।  ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন টিম কাজ করছে। শহর ঘুরে দেখা গেছে শহরের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছ ভেঙ্গে পড়ায় রাস্তার ধারের কাচা দোকান, বস্তি এলাকার কাঁচা ঘর বাড়ি টিনের চাল লণ্ডভণ্ড হয়ে গছে। সেই সাথে বৈদ্যুতিক তার ছেড়া ও খাম্বা ভেঙ্গে পড়া ছিলো।

শহরের মণিহার চত্বরে বিল বোর্ড ভেঙ্গে পড়ে রাস্তার উপর থামিয়ে রাখা বাসের উপর, উপশহরে, আরবপুর এলাকায় ৩৩ হাজার কেভি বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে ও খাম্বা ভেঙে রাস্তার উপর পড়ে ছিলো। সদরের ঝুমঝুমপুর, বিরামপুর, চাঁচড়া, মুড়লি এলাকায় মোটা গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে পড়ায় ওই এলাকায় রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ ছিলো। সেই সাথে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন সড়কের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্নিত হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ছানোয়ার আলম বলেন, প্রত্যেক নিহত পরিবারকে ২০ এবং আহতের চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট টিন মজুদ আছে। ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি দেখে তা সরবরাহ করা হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রত্যেক উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল পাঠানো হয়েছে।


জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার এমএ মঞ্জু জানান, আমফানের তাণ্ডবে যশোর-বেনাপোল সড়কে ২৫টি, যশোর-মাগুরা সড়কে ২৩টি, যশোর-নড়াইল সড়কে ১৫টি, যশোর-ঝিনাইদহ সড়কে ১৬টি, চুড়ামণকাটি-চৌগাছা সড়কে ১২টি, চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে ৩০টি, চৌগাছ-মহেশপুর সড়কে ২৫টি এবং ঝিকরগাছা-চৌগাছা সড়কে ৩০টি গাছ উপড়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে আমরা এই তথ্য পেয়েছি। অন্যান্য সড়কেও গাছ নষ্ট হয়েছে ঝড়ে। যেগুলো তথ্য শুক্রবার এবং শনিবার বলা যাবে। তিনি বলেন, ঝড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন হাজার হাজার গাছ পড়ে গেছে।

যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের ছোবলে জেলা পরিষদের শত শত গাছ পড়ে গেছে বলে জেনেছি। সার্ভেয়ারের কাজ শেষ হলে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫