৮০১ প্রতিমা নিয়ে বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা

এস.এস সোহান
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৪১

শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে দেশের হিন্দু ধর্মালম্বীরা যেমন আনন্দে মাতে তেমনি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। আর বাংলাদেশের দুর্গাপূজাকে ভিন্ন মাত্রা দেয় দেশের বৃহত্তম আয়োজন বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ।
প্রতিবছর প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের সেরা বা বৃহত্তম মণ্ডপ তৈরি হয় শিকদার বাড়িতে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন করছে শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ। এত বড় আয়োজন করতে মোটামুটি সারা বছরই বিভিন্ন ধরণের প্রস্তুতি ও কাজের মধ্যে থাকতে হয় আয়োজকদের।
এ বছর ১ মে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন প্রধান ভাস্কর (কারিগর) বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়। সেই থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেছে ৮০১ প্রতিমা। ৮০১ প্রতিমার মাধ্যমে এবার দুর্গোৎসবে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন ভাস্কররা। প্রতিবছরের মতো এ বছরও রয়েছে শিকদার বাড়ির পুকুরের মধ্যে প্রতিমার আকর্ষণ। পুকুরে এবার অষ্টসখি নিয়ে কৃষ্ণের নৌকা বিলাশের প্রতিকৃতি দেখ পাবেন দর্শনার্থীরা।
প্রতিমা তৈরির শ্রমিক বিথেন বাছাড়, সঞ্জিত বাছার ও ইমন বাছার বলেন, ১৮ বৈশাখ বিজয় দার সঙ্গে এখানে এসেছি। সবাই মিলে খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। বিশ্রামের তেমন কোনো সময় না থাকলেও দেবতাদের কাজ করতে পেরে ভালই লাগছে। আর এত বড় মণ্ডপের কাজ এ বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও করিনি। তাই কাজে কোনো ক্লান্তি মনে হয় না।
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
শিকদার বাড়ি মণ্ডপের প্রধান ভাস্কর বিজয় কুমার বাছাড় বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আমরা মানুষকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ বছর ৮০১ প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে থাকবে মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। কার্তিক, গণেষ, নারদ এরা কিভাবে জন্ম নিল, নারায়ণ ব্রোহাও রুপ কিভাবে পেল। নারায়ণ চক্র পেলেন কিভাবে, তা আমরা তুলে ধরেছি। অন্যান্যবারের থেকে এ বছর সবার আরো বেশি ভাল লাগবে।
প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি রয়েছে প্যান্ডেল ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার জন্য স্টেজের সাজসজ্জা। আর কয়েক বছর ধরে এ সাজসজ্জার কাজ করে থাকেন মাগুরার বৈশাখী ডেকারেশন।
বৈশাখী ডেকারেশনের সাজসজ্জা বিভাগের প্রধান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ৫ মাস ধরে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছি এ মণ্ডপের বাহ্যিক সাজসজ্জার জন্য। আশা করি পূজার আগে সকল সাজসজ্জা আয়োজকদের পছন্দমত করে দিতে পারব।
এসবের পাশাপাশি এ মণ্ডপে থাকছে আলোকসজ্জা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, দর্শনার্থীদের আপ্যায়ন, সরকারি নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশপাশি নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন। এ মণ্ডপকে ঘিরে পূজার পাঁচদিন হাকিমপুর যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। দেশ বিদেশের অগণিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় হাকিমপুর।
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দূর্গোৎসবের শুভ সূচনা হয়েছে। দেবীদূর্গা এবছর ঘোড়ায় চড়ে আসবেন আর যাবেনও ঘোড়ায় । ৪ অক্টোবর থেকে ৮ অক্টোবর দূর্গাপূজা চলবে।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের সবচেয়ে বড় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদারবাড়িতে। আট বছর ধরে লিটন সিকদার নামে এক ব্যবসায়ী এ আয়োজন করে আসছেন। ২০১১ সালে ২৫১ প্রতিমা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এ মণ্ডপের। প্রতি বছরই বাড়তে থাকে প্রতিমার সংখ্যা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৬৫১টি, ২০১৭ সালে তা পৌঁছায় ৭০১ টিতে।
লিটন শিকদার বলেন, আপনারা জানেন এবছর আমার বাবা মারা গেছেন। বাবার ইচ্ছে ছিল গেল বছরের থেকে ১‘শ প্রতিমা বেশি করা হোক। সেই অনুযায়ী এ বছর ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এ বছর দর্শনার্থীরা অন্যান্য বছরের থেকে অন্য ধরণের দেবদেবীদের প্রতিমা দেখতে পাবে। আশা করি দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হবেন।
বাগেরহাট পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে প্রতি বছরই বড় আয়োজন হয়ে থাকে। যার ফলে ভক্ত ও দর্শনার্থীও বেশি থাকে। মণ্ডপ, ভক্ত ও দর্শানার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।