
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
আমফানের আঘাতে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমির পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সীমান্তের ভারতীয় অংশে স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, ধানগুলো পরিপক্ক হওয়ায় তেমন কোন ক্ষতি হবেনা। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, ধান পানির নিচের তলিয়ে যাওয়া এবং আমফান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শ্রমিকের মজুরি বাড়বে এবং উৎপাদন কমবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার পৌর এলাকা ও ৭টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫ হেক্টর। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার মেট্রিকটন। এর মধ্যে নিচু স্থান হওয়ায় এবং ভারতীয় স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় ২০ হেক্টর ধান পানিতে তলিয়ে গেছে এবং এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান ঝড়ো হাওয়ার কারণে নুইয়ে পড়েছে।
সাইক্লোন আমফানের প্রভাবে উপজেলার মাঠের অধিকাংশ কৃষকের বোরো ধান হেলে পড়েছে। এ যেন কৃষকের পাকা ধানে মই দেয়ার মতো অবস্থা। অনেকের পাকা ধান হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। গত দুইদিনের টানা ঝড়-বৃষ্টিতে এসব ধান ভেঙে পড়ে যায়। আর জমিতে বৃষ্টি জমায় পাকা ধানের শীষ এখন সেই পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, খাঁড়ি ও বিল এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কৃষকের পাকা ধান অতিবৃষ্টির পানিতে ডুবতে শুরু করেছে। বিশেষ করে উত্তরের উজানের পানি গড়িয়ে দক্ষিণে আসায় উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের পশ্চিমের দুর্বা আঁচড়ি বিল, কাটলা ইউনিয়নের শৈলান-বেনুপুর মাঠের গুনির খাঁড়ি বিল ও খিয়ারমামুদপুরের কাঠুরিয়া বিলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঠের পাকা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে কাটলা ইউনিয়নের খিয়ারমামুদপুর কাঠুরিয়া বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন কৃষক বুক পানিতে নেমে ধান কাটছেন। সেই কাটা ধানগুলো নৌকায় করে ভাঙ্গাদীঘির পাড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় কয়েক জনের সাথে কথা বলে ধানডুবার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, সীমান্তের জামালপুর-খিয়ারমামুদপুর এলাকায় অবস্থিত স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে।
জানা যায়, খিয়ারমামুদপুরের দক্ষিণে ভারত সীমান্তের স্লুইসগেট অবস্থিত। স্লুইসগেটটিতে সাতটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যে পাঁচটি গত ৫ বছর ধরে স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং বাকি দুইটি গেইট মাঝেমধ্যে সামান্য করে খুলে দিলেও এখন তা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের এসব বিল ও খাঁড়িতে পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
জোতবানী ইউনিয়নের ধনসা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তার তিনবিঘা জমির মিনিকেট ধান হেলে পড়েছে। শ্রমিক সংকট থাকায় সেগুলো ঈদের আগে কাটা সম্ভব হবে না। এই মাঠে তার মতো অনেক কৃষকের ধান পাটিতে পড়ে গেছে।
কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে এ পানি নেমে না গেলে পাকাধান পঁচে নষ্ট হবে আর সময়মত শ্রমিক না পাওয়া গেলে সেই ধান বাড়িতে তোলা সম্ভব হবে না।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিক্সন চন্দ্র পাল বলেন, সাইক্লোন আমফানের প্রভাবে টানা ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় বিরামপুর উপজেলায় প্রায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান হেলে পড়েছে। তবে, সব ধানই এখন পরিপক্ব হয়েছে এবং সেগুলো দুই-একদিনের মধ্যে কাটতে পারলে কৃষকের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এদিকে উপজেলার কয়েকটি স্থানে নিচু জায়গা হওয়ার কারণে প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।