জামালপুরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নার্সদের কুপ্রস্তাবের অভিযোগ

জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ১১:২৬

ছবি: জামালপুর প্রতিনিধি
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফীর বিরুদ্ধে নার্সদের কুপ্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে। তার অশালীন আচরণ, ভয়ভীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও কর্মচারিরা।
করোনার দুর্যোগময় সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এ ধরণের আচরণ ক্রমেই বেড়ে চলছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা।
জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন চিকিৎসক, ১৭ জন নার্স, ৬ জন ধাত্রীসহ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শতাধিক কর্মচারি রয়েছেন। ডা. আবু আহাম্মদ শাফী ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট দেওয়ানগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও কর্মচারিদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফী যোগদানের পর থেকেই তাদের সাথে অশালীন আচরণ, মানুষিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, রাতে কর্তব্য পালনকালীন সময়েও নার্সদের নানা ভাবে হয়রানী করে আসছেন।
এছাড়া তাদের নামে বাসা বরাদ্দ না দিয়ে ভাড়া নিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করে আসছেন। তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে বহিরাগতদের দিয়ে হয়রানী করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অত্যাচার ও মানুষিক এসব নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্সরা স্বাস্থ্য সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট খায়রুল ইসলাম বলেন, উনি যোগদানের পর থেকেই স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। একজন অফিসারের আচরণ এতো খারাপ হতে পারে, তা ধারণার বাইরে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রতি সকল স্টাফ অসন্তুষ্ট। উনি এখানে কর্মরত থাকলে স্টাফরা কাজের আগ্রহ হারাবে। তাই দ্রুত তাকে বদলির দাবি জানান তিনি।
নৈশ প্রহরী ফুল মিয়া জানান, তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও ডা. শাফী তাকে কয়েকধাপে হাসপাতাল কোয়ার্টারে ২৪ দিন তালাবন্ধ করে রাখেন। প্রতিবাদ করলেই স্টাফদের মারধর করেন তিনি। এই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন আয়া জানান, ডা. শাফী প্রতিরাতে বহিরাগতদের নিয়ে হাসপাতালে আড্ডা দেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নার্সদের নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও জানান তিনি।
আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, তিনি ২৪ বছর যাবত স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করছেন। তবে ডা. শাফীর মতো আর কাউকে তিনি দেখেন নাই। কোনো কারণ ছাড়াই তিনি নার্সদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। সুন্দরী নার্সদের কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি বহিরাগত নারী পুরুষদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে আড্ডা দেন। তিনি নিজের একটি বাহিনী তৈরী করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে সেই বাহিনী দিয়ে তাকে মারধর করান তিনি।
সিনিয়র স্টাফ নার্সরা দ্রুত তার বদলি ও শাস্তির দাবি করেন। যদি তাকে দ্রুত বদলি না করা হয় তবে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফীর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং বিষয়টি তদন্তাধীন তাই তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলা হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।