Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার রকির বাড়িতে শোকের মাতম

Icon

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২০, ১৮:২০

লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার রকির বাড়িতে শোকের মাতম

লিবিয়ার গুলিতে ২৬ বাংলাদেশিদের মধ্যে যশোরের রাকিবুল ইসলাম রকির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবার থেকে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও বাঁচতে পারেনি রকি। সে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের ঈসরাইল হোসেন দফাদারের ছোট ছেলে।

জানা গেছে, সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে কলেজের বই খাতা ফেলে ২০ বছরের যুবক রাকিবুল ইসলাম রকি ১৫ ফেব্রুয়ারি পানি জমায় লিবিয়ায়। সেখানে তার চাচাতো ভাই ত্রিপোলিতে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে যাওয়ার আগেই দুর্বৃত্তরা তাদেরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে।

রকির মাহিরুন নেছা জানান, ভিটে-বাড়ি বেঁচে ১০ লাখ মুক্তিপণ দিয়ে রাস্তাতে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমার সোনারে বাঁচতে দিলো না। প্রিয় সন্তান হারিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছেন রকির বাবা ঈসরাইল হোসেন। কারোর সাথে কোন কথা বলছেন না। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

রকির বড় ভাই সোহেল রানা জানান, চার ভাই বোনের মধ্যে রকি সবার ছোট। সে যশোর সরকারি সিটি কলেজের বিএ সম্মান (অর্থনীতি) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলো। সে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

ভিটে-বাড়ির একটি অংশ বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ার ত্রিপোলি পাঠানো হয়। তার এক আপন চাচাতো ভাইও থাকেন ত্রিপোলিতে। সেখানেই তার যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দালাল তাকে ত্রিপোলিতে নিতে পারেনি। রকির বিমানটি বেনগাজিতে অবতরণ করে।

যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দালাল তাকে বেনগাজি থেকে ত্রিপোলিতে নিতে পারছিল না। এ জন্য রকি বেনগাজির একটি তেল কোম্পানিতে কাজ নেয়। সেখানে দুই মাস কাজ করে। কাজের সুবাদে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে।

ওই দালাল রকিকে বেনগাজি থেকে ত্রিপোলিতে চাচাতো ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করে। সে ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে অনুযায়ী ১৫ মে রকি দালালের সঙ্গে বেনগাজি থেকে রওনা হয়। পথে কাছাকাছি মিজদাহ নামক স্থানে ১৭ মে তারা অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হয়।

১৮ মে সন্ধ্যায় তার কাছে বাংলাভাষী একজন ফোন করে রকির মুক্তিপণের জন্য ১২ হাজার ইউএস ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ) টাকা দাবি করে। এ সময় তারা রকির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়।

রকি তাকে জানায়, তাকেসহ অন্য জিম্মিদের অপহরণকারীরা খুব নির্যাতন করছে। টাকা না দিলে হত্যা করবে। দুবাইয়ের একটি একাউন্টে ওই টাকা দিতে বলে। তারা শেষ পর্যন্ত ওই টাকা দিতে রাজি হওয়ায় ১ জুন সেই টাকা দেয়ার কথা ছিলো।

সোহেল রানা আরো জানান, বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে রকি তাকে ফোন দেয়। একইসঙ্গে ঘটনাস্থলের গুগল ম্যাপের ছবিও পাঠায়। ফোনে রকি অপহরণকারীদের সঙ্গে জিম্মিদের মারামারির ঘটনা জানিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে বলে।

এর পর শুক্রবার (২৯ মে) বেলা ১২টার দিকে অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হওয়া আহত মাগুরার তরিকুলের মাধ্যমে রকির মৃত্যুর সংবাদ পান বলেও জানান সোহেল।

রকির মরদেহ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন রকির মা মাহিরুন নেছার ভাই সোহেল।

যশোর- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির জানান, আমি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের কাছে লাশ ফেরত চেয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েছি।

একই সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সদস্য যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদকেও পাঠিয়েছি। তারা আমার কাছে মৃত ব্যক্তির পাসপোর্টের ঠিকানা চেয়েছেন এবং লাশ আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫