করোনাভাইরাস
অনুমোদন ছাড়া ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২০, ১০:৩৭

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় পরীক্ষা ছাড়া গণহারে ওষুধ বা প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছে কভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ এর কোনো টিকা নেই, রোগ উপশমে নিশ্চিত কোনো ওষুধও এখনো পাওয়া যায়নি। রেমডেসিভির, আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিনসহ গুটিকয়েক ওষুধ চিকিৎসকরা ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এর সবই পরীক্ষামূলকভাবে।
করোনার চিকিৎসায় পরীক্ষামূলভাবে ব্যবহৃত এসব ওষুধ ও থেরাপির ফলাফল না দেখে গণহারে তা ব্যবহার ঠিক নয় বলে মত বাংলাদেশ. রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি কভিড-১৯ মোকাবেলা গঠিত কারিগরী কমিটির সদস্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষেশজ্ঞরাও একই মত দিয়েছেন৷
ডা. মুশতাক বলেন, চিকিৎসরা নানা উপায়ে চেষ্টা করছেন। তবে এগুলো সবই পরীক্ষাধীন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে যদি তারা প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমরা একটা সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারব।
অন্যদিকে এসব ওষুধ প্রয়োগের পক্ষের চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো কার্যকর ওষুধ না আসায় রোগীদের সুস্থ করার লক্ষ্যে তারা এসব ওষুধ ব্যবহার করছেন। তবে তারাও চান এসব ওষুধের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হোক।
বাংলাদেশে কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। আর বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে রিসার্চ ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।
এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কোনো ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে কেউ অনুমতি নেয়নি বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।
অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি দেয়া হচ্ছে। এই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির প্লাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে প্রয়োগ করা হয়। প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সুস্থ ব্যক্তিদের প্লাজমা দানের আহ্বান জানিয়ে প্রচার চালান হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গত ১৬ মে থেকে প্লাজমা সংগ্রহ শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ জন প্লাজমা দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চারজনসহ আটটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ জনের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে ওই প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়েছে।
প্লাজমা থেরাপির জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রিসার্চ ইথিকস কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন তারা। প্রটোকল অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৪৫ জনের ওপর তারা এটি প্রয়োগ করবেন।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ এর যেহেতু কোনো ওষুধ নেই তাহলে এটা চেষ্টা করতে তো সমস্যা নেই। এখন যে যার মতো করে দিচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রিতভাবে এটির প্রয়োগ হলে কাকে প্লাজমা দেয়া হচ্ছে, ফলাফল কী আসছে, তা বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে যেন প্লাজমা থেরাপি দেয়া যায়, সেজন্য কর্মসূচি নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অনুরোধও করেছেন তিনি।
তবে বিএমআরসি বলছে, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের জন্য ঢাকা মেডিকেল ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দিতে পারে না। বিএমআরসি থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। এখন পর্যন্ত তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন জানানো হয়নি।
ঢাকার বাইরের একটি সরকারি হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানায় এক সংবাদমাধ্যম।
গাইডলাইনে না থাকার পরও এই ওষুধের ব্যবহার করছেন কেন- জানতে চাইলে ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, কোনো ওষুধই তো নেই। আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন তো নতুন ওষুধ না। এটার সাইড এফেক্ট নাই, সহজলভ্য ও দাম কম। আমার হাসপাতালে বেশ খারাপ সিম্পটম নিয়ে এসেছে, এমন কয়েকজনের উপর প্রয়োগ করেছি, তারা এখন ভালো আছে। তাদের আমি অন্য কোনো ওষুধ দিইনি।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের ওষুধ। দেশে বেক্সিমকো ফার্মা রেমডেসিভির তৈরি করে তা সরকারের কাছে দিয়েছে।
করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা ১৪ জন রোগীর ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন। তবে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এই ওষুধ প্রয়োগের ফল এখনো বোঝা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। -ডয়চে ভেলে