
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মে মাসজুড়ে সাধারণ ছুটি থাকায় জরুরি পরিবহন ছাড়া সড়ক পথে সব পরিবহনের চলাচল বন্ধ ছিল। অথচ এ মাসেও ২১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯২ জন। এছাড়াও আহত হয়েছেন ২৬১ জন। নিহতের মধ্যে ৩৯ জন নারী ও ২৪ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ১৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
দেশের ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তৈরি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এতে ৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় ৫৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। পরিবহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২১ জন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন। যা মোট দুর্ঘটনার ৬৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ১৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় ১৯ জন ট্রাক যাত্রী, ১২জন পিকআপ যাত্রী, ৮ জন প্রাইভেট কার যাত্রী, ১১ জন সিএনজি যাত্রী, ৪ জন কাভার্ডভ্যান যাত্রী, ৩ জন মাইক্রোবাস যাত্রী, ৫ জন ট্রলি যাত্রী, ২১ জন অটোরিকশা যাত্রী এবং ৬৪ জন নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ও স্থানীয় যানবাহনের যাত্রী নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে মহাসড়কে ৮৯টি (৪১.৭৮%), আঞ্চলিক সড়কে ৮৩টি (৩৮ দশমিক ৯৬%) এবং গ্রামীণ সড়কে ৪১টি (১৯ দশমিক ২৪%) ঘতেছে। সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্যে ৫২টি মুখোমুখি সংঘর্ষ (২৪ দশমিক ৪১%), ৬১টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (২৮ দশমিক ৬৩ %), ৮৪টি চাপা দেয়া ও ধাক্কা দেয়ার ঘটনায় (৩৯ দশমিক ৪৩%) এবং অন্যান্য কারণে ১৬টি (৭ দশমিক ৫১%) ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ট্রাক ৩৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মোটর সাইকেল ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, পিকআপ ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কাভার্ডভ্যান-ট্রলি-ট্রাক্টর ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ, কার-মাইক্রোবাস-জিপ ৬.১০ শতাংশ, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা ১৬দশমিক ৪৩ শতাংশ, নসিমন-করিমন-ভটভটি ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং অন্যান্য যানবাহন ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ দায়ী। এসব দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩১১টি।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; শুধু কমিটি গঠন এবং সুপারিশমালা তৈরির চক্র থেকে বেরিয়ে টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করতে হবে।