Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

৬ দফা মুক্তির দাবি হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২০, ০৮:৩৮

৬ দফা মুক্তির দাবি হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা ঘোষিত ৬ দফা বাঙালির কাছে সে সময় তাদের মুক্তির দাবি, বাঁচার দাবি হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ৬ দফা দাবিটা জনগণ এমনভাবে লুফে নিয়েছিল, আমি জানি না, পৃথিবীর কোনো দেশে এত দ্রুত কোনো দাবি এত বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কিনা। বাংলার মানুষ একে নিয়েছিল তাদের বাঁচার অধিকার হিসেবে ও এটা প্রকৃতও তাই ছিল।

ঐতিহাসিক ৬ দফা উপলক্ষে গতকাল রবিবার (৭ জুন) গণভবনে পূর্বে ধারণকৃত আলোচনা অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপত্বি করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনা সভাটি প্রচারিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই ছিল সবথেকে বড় বিষয় যে, এত দ্রুত এই দেশের মানুষ ৬ দফাকে শুধু সমর্থনই করেনি তারা স্বায়ত্তশাসনের এই দাবিকে নিজের দাবি হিসেবে গ্রহণ করলো।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সে সময় দেখা গেল আমরা খুবই অরক্ষিত। ভারত-পাকিস্তান যখন তাসখন্দ চুক্তি করলো তখনো এই পূর্ববঙ্গ ছিল অরক্ষিত। তারপরে যখন ৬ দফা দেয়া হলো তখনই এদেশের গণমানুষ জেগে উঠলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ দফার ভিত্তিতেই ’৭০ এর নির্বচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পায়। কাজেই ৬ দফা ও ৭ জুনের কারণে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেজন্য দিবসটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালে বুকের রক্ত দিয়ে আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদাকে রক্ষা করতে হয়েছে। আবার ৭ জুন আমাদের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন, সেখানেও রক্ত দিয়ে আমাদেরকে লিখে যেতে হয়েছে যে, আমরা আমাদের স্বাধিকার চাই।

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে আলোচনায় অংশ নেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ডিজিটাল মাধ্যমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীও অংশ নেন।

১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা আন্দোলনকে সফল করার জন্য আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে তৎকালিন পাকিস্তানী শাসকযন্ত্রের পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে আত্মাহুতি দানকারী শ্রমিক নেতা মনু মিয়া, আবুল হোসেন, শফিক, শামসুরসহ সকল শহীদদের প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আর তারই পথ বেয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কাজেই আজ এই ৭ জুন যারা জীবন দিয়ে সেদিন বাঙালির অধিকারের কথা বলে গেছেন- আমি তাদের স্মরণ করছি। স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যিনি সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে ধাপে ধাপে এই বাঙালিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, ৭ জুনের হরতাল থেকে শুরু করে আন্দোলনে আমার মায়ের বিরাট ভূমিকা ছিল। আামি আজকের দিনে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকেও স্মরণ করছি। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে ও সম্ভ্রমহারা দু’লাখ মা-বোনকে।

তিনি জাতির পিতার ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনারা এই বইটি পড়লে দেখতে পাবেন সে সময় কিভাবে পাকিস্তানি শাসকশ্রেণী এদেশের মানুষের ওপর গ্রেফতার ও অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। সে সময় একদিকে অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যিনিই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। পাশপাশি এদেশের মানুষ আরো বেশি করে সচেতন হচ্ছে, সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অবশ্য কিছু দালাল ছাড়া। সবসময় কিছু দালাল থাকে। এটাই সমস্যা। 

জাতির পিতা বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-পাকিস্তানের ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর লাহোরে সর্বদলীয় বিরোধী দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রদানকালে জাতির পিতা প্রথম ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। যে দাবির মূল বক্তব্য ছিল- প্রদেশ হিসেবে আমাদের দেশকে সুরক্ষিত, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। সেই সাথে বাঙালির যে অস্তিত্বের দাবি সেই দাবিটা তুলে ধরা।

তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয় ঐ সভায় দাবি উত্থাপনকালে বঙ্গবন্ধুকে বাধা দেয়া হয় এবং আমাদের দেশেরও অন্যদলের নেতারাও জাতির পিতাকে বাধা দিয়েছিলেন। সে সময় গোলটেবিল আলোচনার পরদিন জাতির পিতা সংবাদ সম্মেলন করে এই স্বায়ত্তশাসন যে পাকিস্তানের প্রত্যেকটি প্রদেশেরই দাবি, সেই কথা তুলে ধরেছিলেন।

তিনি বলেন, পরে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরেও বঙ্গবন্ধু সংক্ষিপ্তাকারে এই দাবি তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ও কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গ্রহণ করা হয়। জাতির পিতা ৬ দফা দেয়ার পর সারা বাংলাদেশে এটা প্রচার করার উদ্যোগ নেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের এই দাবি সারাদেশে প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়। মাত্র ৩৫ দিনে জাতির পিতা সারাদেশে ৩২টি সভা করেন। কিন্তু এরমধ্যে জাতির পিতা যখন যেখানে যেতেন সেখানে তাকে গ্রেফতার করা হোত। এভাবে আটবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগরের জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ফিরলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে আর জামিন দেয়া হয়নি। ফলে আন্দোলন-সংগ্রাম কঠোর পরিস্থিতি পরিগ্রহ করে।

এরপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও দেশবাসীর জাতির পিতাকে মুক্ত করে আনার -’৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, স্বাধীনতার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে ভাষার অধিকার যখন কেড়ে নেয়া হলো তখন জাতির পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তখনই তিনি উদ্যোগ নিলেন এবং মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে নির্র্মমভাবে হত্যা করে আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করা হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর যে উদ্যোগ গ্রহণ করে তার ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস এসে সকলের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপীই এখন সমস্যা। প্রতিটি অর্র্জনই আমাদের রক্তের বিনিময়ে করতে হয়েছে। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায়না। এটা বৃথা যেতে পারেনা।

তিনি বলেন, আমি আশা করি আমাদের দেশের প্রত্যেকটি মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনে চলবেন। ইনশাআল্লাহ আমরা মুক্তি পাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ও জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। -বাসস

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫