Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস: খাদ্য ঝুঁকিতে দেশ

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২০, ০৯:১৩

করোনাভাইরাস: খাদ্য ঝুঁকিতে দেশ

করোনাভাইরাস দুর্যোগে দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। 

জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বড় আকারের দুর্ভিক্ষ হতে পারে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী নতুন করে আরো ১৩ কোটি মানুষকে তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে। এর পেছনে কৃষি উৎপাদন হ্রাস ও অনেক দেশ খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধ করে দেয়ার আশঙ্কাকে কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। 

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দেশের খাদ্য পরিস্থিতি কেবল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর সাথে কৃষকের ন্যায্য মূল্য পাওয়া ও বাজার ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও আবশ্যক বিষয়। 

তবে খাদ্য সংকট মেটাতে ধান, চাল ও গম সংগ্রহে জোর দিয়েছে সরকার। করোনাকালে ২২ লাখ ২৫ হাজার টন খাদ্যশস্য কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেক খাদ্যশস্য কেনাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের শিকার হবে। বর্তমানে দেশে হতদরিদ্র এক কোটি ৬৮ লাখ ও দরিদ্র তিন কোটি ২৮ লাখ মানুষ। এই প্রায় ৫ কোটির সাথে নতুন যুক্ত হওয়া দরিদ্রের ঘরে খাবার পৌঁছাতে সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। 

এছাড়া করোনাভাইরাসে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে দেশের ২৬ জেলায় প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা। এজন্য কৃষিতে মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের ৭০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া নতুন করে দরিদ্র হতে পারে আরো ২০ শতাংশ মানুষ। 

খাদ্যসংকট মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সরকার অর্থনীতি রক্ষায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও মজুদের ওপর জোর দিয়েছে। এই মৌসুমে ২২ লাখ ২৫ হাজার টন খাদ্যশস্য কেনা শুরু হয়েছে।’ 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আমফানে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পটুয়াখালীতে কৃষির অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য চাষ ও চিংড়ি ঘেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়িসহ পাট, আম, লিচু ও মুগ ডালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য পর্যাপ্ত চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের কাছে খাদ্য মজুদ আছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার টন। এর মধ্যে চাল আট লাখ ২৩ হাজার ও গম তিন লাখ ১৬ হাজার টন। খাদ্যশস্যের মজুদও পর্যাপ্ত। কর্মকর্তারা জানান, গত বছর এ সময়ে মজুদ ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার টন খাদ্যশস্য। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ও গম দুই লাখ তিন হাজার টন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন। বর্তমানে ১৩ লাখ ২২ হাজার টনের সরবরাহ আছে। পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। মজুদ আছে প্রায় ১৫ লাখ টন। দেশের উৎপাদন ও ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজের সংকট হবে না বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। মসুর ডালের বার্ষিক চাহিদা পাঁচ লাখ টন। সরবরাহ লাইনে আছে প্রায় চার লাখ টন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে পারলে নিত্যপণ্যের অভাব হবে না ও দামও বাড়বে না। দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিজেদের মতো করেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের পকেট কাটছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোর হতে হবে। 

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে যেন কৃষি উৎপাদন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সার, সেচ, ইক্ষু চাষসহ কৃষিখাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। হাওর অঞ্চলসহ সারাদেশে ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘দেশের ২১ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি মানুষ দরিদ্র। তারা সবাই দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া কমবেশি ১০ কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশিদিন বন্ধ থাকলে তারা সবাই সংকটে পড়বে। মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও মধ্যবিত্ত পরিবার ক্রয়ক্ষমতা হারাবে। তাই তারাসহ স্বল্প পেনশনভোগী কর্মচারী, নিম্নআয়ের পেশাজীবী, প্রান্তিক কৃষক ইত্যাদি শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সংরক্ষণে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।’ 

করোনাভাইরাসে দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হবে- এমন আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে করোনাভাইরাসের স্থায়িত্ব, অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব ও সরকারের পদক্ষেপের ওপর।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন ও মজুদে হয়ত সমস্যা নেই; কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাজার ব্যবস্থাপনাটাই বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। পরিস্থিতি মোকাবেলার সাফল্য নির্ভর করবে বাজার ব্যবস্থাপনা ত্রুটিমুক্ত থাকার ওপর।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫