
ফেনীর পরশুরাম উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে যোগদানের পর থেকে একাধিকবার প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাৎ, মেরামত কাজে অনিয়ম, বদলি বাণিজ্য, পুরস্কারের সরঞ্জাম আত্মসাৎ এবং নারী শিক্ষকদের সাথে অনৈতিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
গত ১০ জুন উপজেলার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার।
এর আগেও শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) শিরীন আকতারের উপস্থিতিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আর্তসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য এবং নারী শিক্ষকদের সাথে অনৈতিক আচরণ করার অভিযোগ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরঞ্জাম বিতরণ না করা, একই অর্থবছরে শিক্ষা অফিস মেরামতের কাজের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪ লাখ টাকার দৃশ্যমান কোনো কাজ না করে বিল প্রস্তুত করা, বদলি বাণিজ্য, ৫০টি স্কুলের উন্নয়নের কাজের বরাদ্দকৃত টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করা, শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়, নারী শিক্ষকদের সাথে অনৈতিক আচরণ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে অনৈতিক আচরণের প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি জাতীয় মিনা দিবসে পুরস্কারের সরাঞ্জামাদি না দেয়া, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে পুরস্কার সামগ্রী না দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
পাশাপশি নীতি বর্হিভূতভাবে টাকাসহ বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে একই ব্যক্তিকে বারবার প্রশিক্ষণ সুযোগ দেয়ার অভিযোগ রযেছে। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বেশ কিছু শিক্ষককে সরকারি দক্ষতা উন্নয়নের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত করেছেন বলে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন।
এছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নিদিষ্ট হারে কমিশন আদায় করেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহির উদ্দিন টিপু। টিপু জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকদের হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে সর্বোচ্চ তিন বছর থাকার নিয়ম থাকলেও বারবার তদবির করে গত ৭ বছর ধরে পরশুরাম উপজেলায় রয়ে গেছেন মিজানুর রহমান।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিজানুর রহমান ২০১৪ সালের জুন মাসে যোগদান করেন। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্কুলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ, বার্ষিক বরাদ্দ, সরঞ্জাম ক্রয়ের একাধিক প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও টাকা না দিলে শিক্ষকদের বদলিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন, আমি যথাযথভাবে বরাদ্দকৃত সরাঞ্জাম বিতরণ করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন জানান, আমি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে যোগ দেয়া পর থেকে বেশি সময় হয়নি। ফলে এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছিনা। তবে তার বিরুদ্ধে উপজেলা সমন্বয় সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি সরাসরি অভিযোগ করায় বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।