Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিয়ে সরকার যা চায়

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০, ১২:৪৮

এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিয়ে সরকার যা চায়

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে এলাকাভিত্তিক রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করে সেই এলাকাকে লকডাউন করার পরিকল্পনা পুরোদমে বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট কোন সময় এখনো ঠিক হয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট এলাকা রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে লকডাউন করবে এবং সেই এলাকায় তিন থেকে পাঁচদিন আগে তা ঘোষণা করা হবে।

তবে দেশকে রেড, ইয়োলো এবং গ্রীন জোনে ভাগ করার এই পরিকল্পনায় সরকার আসলে কী করতে চাইছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

সরকার যখন রেড জোন লকডাউন করার জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেই ছুটি ১৬ জুন থেকেই শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু রেড জোন চিহ্নিত করা এবং লকডাউন করার প্রস্তুতি পর্বই এখনো শেষ করা যায়নি। ফলে রেড জোনে কবে থেকে এবং কিভাবে লকডাউন শুরু করা হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, খসড়া তালিকাটি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তা ফাঁস হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে আলোচনা করে রেড জোন চিহ্নিত করা এবং লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু কবে নাগাদ পুরোদমে তা শুরু হবে, সেটা তিনি বলেননি।

অধ্যাপক আজাদ বলেছেন, একসাথে পুরো বাংলাদেশের সব এলাকা লকডাউন হবে, তা কিন্তু নয়। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে রেড জোন হবে, আবার ওখানে যদি অবস্থার উন্নতি হয়, তাহলে ইয়োলো এবং গ্রীন জোন হিসাবে চিহ্নিত হবে।

তিনি আরো বলেছেন, এটা নির্ধারিত কবে থেকে শুরু হবে, তা কিন্তু বলা যায় না। ওই প্রশ্ন যদি করেন, তাহলে শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে, গাজীপুরে, নারায়ণগঞ্জে এবং নরসিংদীতে। এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের মতামত চাওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আমরা একটা টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছি। তারা আগের পর্যালোচনা বা পরামর্শগুলো আবার পর্যালোচনা করছে।

যদিও ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন করা হচ্ছে, এর পরও রেড জোন চিহ্নিত করে সেখানে আসলে কি করা হবে-সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মাঝে পরিষ্কার ধারণা নেই।

রেড, ইয়োলো এবং গ্রীন জোন হিসাবে চিহ্নিত এলাকার যে তালিকার খসড়া সরকারের কারিগরি কমিটি তৈরি করেছে, সেই তালিকা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তাতে চিহ্নিত এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে অনেক প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, এখন সংক্রমণ বিস্ফোরণের মত লাফিয়ে না বাড়লেও বৃদ্ধির হারটা অনেক বেশি। সেই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধের জন্য এখন মানুষকে ঘরে রাখা বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কোন পদক্ষেপ নেই।

তারা মনে করেন, এখন প্রতিরোধের কোন কর্মসূচিই যেহেতু নেই, ফলে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে তাদের সন্দেহ থাকলেও সেটি হলেও অন্তত একটা পদক্ষেপ থাকা উচিত।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সংক্রমণ রোগ কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. মাহফুজা রিফাত বলেছেন, এই জোন-ভিত্তিক লকডাউন নিয়ে তো যথেষ্ট বিভ্রান্তি আছেই। এই জোন বলতে আসলে কি বোঝায়? সাধারণ মানুষ বোধ হয় এখনো সেটা জানে না যে এটা কিভাবে কার্যকর হবে। তারপরে অফিস খোলা নিয়েও বোধ হয় বিভ্রান্তি আছে। প্রথমত তথ্যগত বিভ্রান্তি আছে। আর আমরাও আসলে জানি না যে আসলে কি অ্যাপ্রোচে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেছেন, এ মুহূর্তে আমাদের যে অবস্থা, তাতে এখন প্রথমে দরকার মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। সেটা এই জোন-ভিত্তিক করে কতটা কার্যকর হবে - তা আমরা জানি না। কিন্তু কিছুতো করতে হবে। মানে একদম ছেড়ে দিলেও তো হবে না।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এখন এই জোন-ভিত্তিক লকডাউনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই এলাকাভিত্তিক লকডাউন কিভাবে কার্যকর করা হবে, সে ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেছেন, রেড জোন আসলে প্রত্যেকটা এলাকার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করবে যে কোথায় তা হবে। যদি ঢাকা শহরের কথা বলি, তাহলে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আমাদের মেয়র এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে ঠিক করবেন কোথায় রেড জোন করবেন। তারা সেই রেড জোন করার জন্য আগেই সব পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা ঠিক করে নেবেন। রেড জোন করতে গেলে স্থানীয়ভাবে একটা কমিটি করতে হবে। সেই কমিটি এবং পরিকল্পনার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আরো জানিয়েছেন, রেড জোন হবে খুব ছোট জায়গায়, একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায়। যে জায়গাটি আমরা ম্যানেজ করতে পারি। আপনি ধরেন, ঢাকার মিরপুরের কথা। মিরপুর বলতে গোটা মিরপুর কখনো লকডাউন হবে না। মিরপুরের একটা সেক্টরের একটি অংশ লকডাউন হবে। অথবা কোন একটি রাস্তায় সংক্রমণের হার বিবেচনায় কয়েকটা বাড়িও লকডাউন করা হতে পারে। এভাবে ছোট এলাকা লকডাউন হবে। তাদের এই পরিকল্পনা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকার কিছু নাই।

তিনি উল্লেখ করেন, যে অঞ্চলকে রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হবে, সেই এলাকার মানুষ তিন থেকে পাঁচদিন আগে জানতে পারবেন লকডাউন করার সময়সহ সব বিষয়ে। রেড, ইয়োলো এবং গ্রীন জোনের যে খসড়া তালিকা রয়েছে, তাতে এখন ছোট ছোট এলাকাকে রেড হিসাবে চিহ্নিত করে ম্যাপ তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু এই কাজে জটিলতা হচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকায়। কিন্তু এই রোগীদের বড় অংশের সুনির্দিষ্ট এলাকাসহ বিস্তারিত ঠিকানা কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। সেজন্য ছোট এলাকা চিহ্নিত করার কাজ কঠিন হচ্ছে। এরপরও অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা দাবি করছেন।-বিবিসি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫