Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ঢাকাতেই কভিড-১৯ রোগী সাড়ে সাত লাখ!

Icon

এ আর সুমন

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ০৯:৪৫

ঢাকাতেই কভিড-১৯ রোগী সাড়ে সাত লাখ!

বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর হয়ে ওঠা প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সাড়ে সাত লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) কর্মকর্তা জন ক্লেমেনসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও বাংলাদেশের সরকারের দেয়া তথ্যমতে, গতকাল বুধবার (১৭ জুন) পর্যন্ত দেশব্যাপী শনাক্ত হওয়া কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪৮৯ জন। 

‘বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে’ শিরোনামে গত সপ্তাহে ইকোনমিস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে, বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরবে এমন আশায় এসব অঞ্চলে জারি করা লকডাউন গত সপ্তাহে তুলে নেয়া শুরু হয়। এতে করে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ আবার দ্রুত বাড়বে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি ও প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান অপেক্ষাকৃত পরিমিত দেখাচ্ছে। তবে অনেকে আক্রান্ত হলেও রয়েছেন গণনার বাইরে।

বর্তমানে প্রতি দুই সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে করোনাভাইরাস সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবে। সে সময় সরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ও মৃত্যু দেড় লাখ হতে পারে। কম হারে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অর্থ প্রকৃত পরিসংখ্যান আরো ভয়াবহ হতে পারে। 

পাকিস্তানে এক বিদেশি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাস্তবে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর পরিসংখ্যান সরকারের দেয়া তথ্যের দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এছাড়া পাকিস্তানি চিকিৎসকদের ভাষ্য, দেশটির সরকার হাসপাতালে পর্যাপ্তসংখ্যক বেড আছে বলে যে দাবি করছে, তা ভিত্তিহীন। 

এদিকে ভারতের মুম্বাইয়ের এক নার্স জানান, এপ্রিলের শুরু থেকে কোনো ধরনের ছুটি ছাড়াই তিনি ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন। মে মাসে তিনিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। 

বলা হচ্ছে, তিনটি দেশই মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে আত্মসন্ধান ও দোষারোপ করার নীতিকে চাঙ্গা করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জোরেশোরে বলছেন, তিনি কখনোই লকডাউনের সমর্থক ছিলেন না। যে বিষয়ে তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, লকডাউন অকারণে গরিবদের বেশি আঘাত করতে পারে ও তা রোগটিকে কেবলই ধীর করতে পারে। 

অবশ্য তার সমালোচকরা এ কথার বিপরীতে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইমরান সরকারের ব্যর্থতার একটি বড় কারণ হলো পাকিস্তানের লকডাউন গোড়া থেকেই অকার্যকর ছিল। কারণ তা আধাখেচড়া ও অদক্ষ উপায়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছিল। 

বাংলাদেশে কভিড-১৯ মোকাবেলায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন তৈরি, বস্তিগুলোতে আনুমানিক ৭৫ ভাগ গড় আয়ের পতন ও কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিকের গ্রামে ফিরে যাওয়ার মতো ঘটনা লকডাউন থেকে লাভের সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি হাসপাতালের করোনাভাইরাস সেবায় নিয়োজিত এক চিকিৎসক সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘আমাদের আসলে সব জায়গায় ঘাটতি। সবখানেই সংকট। সবখানেই অব্যবস্থাপনা। শুরু থেকে প্রস্তুতি নিয়ে যত কথা বলা হয়েছে, তা না করে ওই সময় যদি ঘাটতির বিষয়ে সরকার মনোনিবেশ করত, কিছুটা হলেও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তা কাজে দিত; কিন্তু এখন কী হয়েছে! লেজেগোবরে অবস্থা। ডাক্তারদের ওপর দিয়ে যা যাওয়ার যাচ্ছে। যেসব দেশ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফল তাদের দেখে শিক্ষা নেয়ার দরকার ছিল, আমরা তা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। এখন তো এর খেসারত দিতেই হবে। দিতে হচ্ছে। নানা সংকট আর অব্যবস্থাপনার দেশে দিনরাত খেটে যাচ্ছে চিকিৎসকরা। ওদিকে সাধারণ মানুষকে না খাইয়ে ঘরে আটকে রাখা তো যাবে না, তারাও বাইরে বের হতে বাধ্য।’

সম্ভবত সবচেয়ে গুরুতর গলদপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এই অঞ্চলে সর্বাধিক কঠোর নিষেধাজ্ঞা ভারত সরকার ঠিকই চাপিয়ে দিতে পেরেছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও, সরকার এটা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, তাদের এসব পদক্ষেপ লাখ লাখ আন্তঃরাজ্য অভিবাসী শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলে দেবে। তারা হঠাৎ করেই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এক বিশাল জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। 

এদিকে দ্য ইকোনমিস্টের ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি। প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, প্রতিবেদনে তাদের নির্বাহী পরিচালকের বক্তব্য প্রসঙ্গের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

প্রতিবেদনে উদ্ধৃত বক্তব্যের ব্যাখা দিয়ে আইসিডিডিআরবির বিবৃবিতে বলা হয়, কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা কত হতে পারে জানতে চাওয়ায় অধ্যাপক ক্লেমেনস বলেছিলেন, মহামারি শুরুর পর থেকেই আইসিডিডিআরবি তাদের কর্মীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় রেখেছে। কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে তাদের ২৪ ঘণ্টার হটলাইনে স্টাফ ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে এবং আইসিডিডিআরবির ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দেয়া আছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, আইডিসিআরের সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা ও আইসোলেশন নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং কন্টাক্ট ট্র্যাকিং হচ্ছে। 

বিবৃতিতে জানা যায়, তাদের মহাখালী ক্যাম্পাসে প্রায় দুই হাজার কর্মী কাজ করেন ও তাদের চার থেকে পাঁচ শতাংশ কর্মী কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। আইসিডিডিআরবির চার থেকে পাঁচ শতাংশ কর্মী আক্রান্ত হওয়ার এই হার পুরো ঢাকা শহরের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পরিস্থিতিকে বোঝায় না। আর এই হার ধরে পুরো শহরের পরিস্থিতির তুলনা করাটাও যৌক্তিক নয়। এই সংখ্যাকে কেউ যদি পুরো ঢাকার জনসংখ্যার সাথে মিলিয়ে তুলনা করতে যান, তখন মোট শনাক্তের সম্ভাব্য সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে সাত লাখ। 

একইসাথে ঢাকায় কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ- দ্য ইকোনমিস্টকে এমন তথ্য দেয়ার কথা নাকচ করেছেন জন ক্লেমেনস। তিনি বলেন, ‘আইসিডিডিআরবির কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার হার থেকে ঢাকা শহরে আক্রান্তের হার হিসাব করা পুরোপুরি অযৌক্তিক। আইসিডিডিআরবির চার থেকে পাঁচ শতাংশ কর্মী আক্রান্ত হওয়ার অর্থ ঢাকার চার থেকে পাঁচ শতাংশ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নয়। এটার ভুল ব্যাখ্যা এসেছে দ্য ইকোনমিস্টে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫