Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল

Icon

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ১৬:২৪

টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল

ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে গত তিনদিন ধরে অতিবৃষ্টির কারণে বাঁকখালী, ফুলেশ্বরী ও চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে  নেমেছে ঢলের বাহার। ঢলের তীব্রতায় ভেঙে গেছে বিভিন্ন এলাকার বাঁধ।

পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের প্রধান ও উপসড়কগুলো। পানির সঙ্গে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনায় একাকার রাস্তাঘাট। পানি ঢুকেছে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে।

ভারী বর্ষণ আর ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের পোকখালী ও ইসলামাবাদ এলাকার বেশ কিছু গ্রামের রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠে। ভাঙনের কবলে পড়েছে সড়ক। জালালাবাদ, ঈদগাঁওয়ের ভোমরিয়াঘোনা, চৌফলদন্ডী ও কালিরছরা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন, চকরিয়া ও পেকুয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের একই অবস্থা। অনেক পরিবার রান্নার কাজ সারতে হিমশিম খাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে আছে কয়েক হাজার পরিবার।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) দুপুর থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ বুধবার (১৮ জুন) দুপুর  ২টা পর্যন্ত টানা চলছিল। তিনদিনের গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে প্রায় ১৭৬ মিলিমিটার। এর মধ্যে বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২২৯ মিলিমিটার। মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১২৩ মিলিমিটার। বিষয়টি জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আবু মহসিন।

এখনো থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ফলে ঢলের তীব্রতা বাড়ছে। এ কারণে নামতে পারছে না সমতলে জমে থাকা পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন স্থায়ী থাকতে পারে বলে জানায় কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস। সঙ্গে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন, ঝিলংজার চান্দেরপাড়া, খরুলিয়া, দরগাহপাড়া, পোকখালীর মধ্যম পোকখালী, নাইক্ষংদিয়া, চৌফলদন্ডী, নতুনমহাল, ঈদগাঁও বাজার এলাকা, কালিরছড়া, রামুর উপজেলার ধলিরছরা, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, উত্তর মিঠাছড়ি, পূর্ব ও পশ্চিম মেরংলোয়া, চাকমারকুল, কলঘর, লিংকরোড ও চকরিয়া পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

একই সঙ্গে চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমান চর, কাজিরপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়া, হালকাকারা, মৌলভীর চর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তরছপাড়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নামার চিরিংগা, কোচপাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভীর কুমসহ অনেক স্থানের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।

ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, ভারী বর্ষণে ঈদগাঁওয়ের নদীতে তীব্র বেগে ঢল নেমেছে। বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও এলাকার রাস্তাঘাট। বিচ্ছিন্ন রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। চরম দুর্ভোগে আছি আমরা।

জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান সরোয়ার ডিপো বলেন, ঢলের তীব্রতায় জালালাবাদ মনজুর মৌলভীর দোকান এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিম্ন এলাকার বাড়িঘরে প্রবেশ করছে পানি। ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। এখানকার দুর্বল বেড়িবাঁধ মেরামতে গত বছর বরাদ্দ এলেও চেয়ারম্যান তা মেরামত না করায় এখন স্থানীয়রা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামিরুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জনতাবাজার সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ।


কোনাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি আছেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, উপজেলার বরইতলী ও কাকারা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এভাবে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধস ও নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলায় ১৮ ইউনিয়নের হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, বিএমচর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, ও খুটাখালি ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনসাধারণকে বন্যা, পাহাড় ধস ও ভাঙন মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে, ভারী বর্ষণে চরম আতঙ্কে রয়েছেন উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় পাহাড়ে বসতি গড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ক্যাম্প এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামাল হোসেন বলেন, অতি বর্ষণে পাহাড় ধস বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয়দের রক্ষার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।



 




Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫