Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে আইসিইউ কাগজে কলমে, করোনা চিকিৎসায় সংকট

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ০৯:৫৭

চট্টগ্রামে আইসিইউ কাগজে কলমে, করোনা চিকিৎসায় সংকট

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হিসেবে ঢাকার পরের অবস্থানেই রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরী। আড়াই মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করেছিল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গঠিত বিভাগীয় কমিটি।

গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক সভায় চার পর্যায়ে তিনটি করে হাসপাতাল ক্রমানুসারে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এসব বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর ব্যবহার শুরু করেনি। এর ফলে গুরুতর আক্রান্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সংকট চলছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

চট্টগ্রামে রোগীদের চিকিৎসা সংকট প্রসঙ্গে সরকারের সমন্বয়হীনতা এবং বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে দায়ী করেছেন চট্টগ্রামের ‘এ্যাকশন এগেইনস্ট করোনা’ নামক নাগরিক সংগঠনের নেতা সত্যজিত বিশ্বাস।

তিনি জানান, করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো জরুরি রোগীকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছে না। ওদিকে পরীক্ষা করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, লোকবল সংকট। তারপরও রিপোর্ট পেতে সময় লেগে যায় সাত থেকে দশদিন। আর ততদিনে অনেক সংকটাপন্ন রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ অবস্থায় সরকার যে মৃত্যু বা আক্রান্তের পরিসংখ্যান দিচ্ছে তার চেয়ে আসল সংখ্যা অনেক বেশি।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরে ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা চালুর নির্দেশনা দিয়েছে উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান গতকাল এ আদেশ দেন।

করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির পরও বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসা চালু না করায় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে করা একটি রিটের শুনানিতে গতকাল এ নির্দেশনা আসে।

নির্দেশনার পর ওই হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন কি না- তা সোমবার ২২ জুন প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানানোর জন্য চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এগুলো হলো- পার্কভিউ হাসপাতাল, মেডিক্যাল সেন্টার, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল (ইউনিট-২), ডেল্টা হাসপাতাল, সিএসটিসি হাসপাতাল, সিএসসিআর, ন্যাশনাল হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও ম্যাক্স হসপিটাল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ও আজিজুল হক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিবাদী করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এ রিটে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পরও নগরের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিকার দাবি করা হয়।

চট্টগ্রামে এমনিতেই চিকিৎসা ছাড়া মানুষ মরছে। করোনা সংক্রমণ শুরু পর প্রায় তিনমাস ধরে চট্টগ্রামে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ আছে। তার ওপর টেলিমেডিসিন সেবাও বন্ধ করে দিয়েছে বিএমএ।

২৫ মার্চ থেকে বিএমএ’র পক্ষ থেকে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছিল। হটলাইনে উপসর্গ জেনে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্র ও পরামর্শ দিচ্ছিলেন। কিন্তু খুলনায় একজন ডাক্তারকে রোগীর স্বজনরা পিটিয়ে মেরে ফেলার প্রতিবাদ হিসেবে টেলিমেডিসিন সেবা বন্ধ করে দিয়েছে বিএমএ।

এদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের করোনা মোকাবেলায় সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

শনিবার (২০ জুন) জয়নাল আবেদিন শিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজ গুলশান শাখাকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রী হাসপাতালের উদ্বোধন করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় সবার অবদান থাকতে হবে, সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল একযোগে কাজ করলে ইনশাআল্লাহ আমরা খুব দ্রুতই করোনাকে দেশ থেকে বিদায় জানাতে পারব। সরকারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা লাগে অবশ্যই আমরা সেটা করব।

এদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করার বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এখনো কোন বেসরকারি হাসপাতালে একজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এমনকি বেসরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ আইসিইউ সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এমন আরো নানা প্রস্তুতির অভাবের অভিযোগ উঠলেও চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছে।

তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে মেডিকেল কর্মীদের বড় ধরণের সংকট রয়েছে। তার মতে, ঢাকায় যে পরিমাণ ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন চট্টগ্রামে সে পরিমাণে দক্ষ জনবল নেই বলে উল্লেখ করেন।

সংকট মোকাবেলায় এরই মধ্যে যেসব বেসরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০টির বেশি সেইসব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোর অর্ধেক শয্যায় যেন করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসা দেয়া যায় সেটা নিশ্চিত করতে আলোচনা চলছে বলে জানান রাব্বি। এ বিষয়ে প্রশাসন নজরদারি করছে বলেও তিনি জানান।

আইসিইউ সেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ মনে করে, করোনাভাইরাস হলেই আইসিইউ লাগবে। কিন্তু আসলে ৮০% রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হয়ে যান। যাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তাদেরকে অক্সিজেন সেবা দেয়ার প্রয়োজন হয়। আমরা সেই অক্সিজেন সেবা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

এদিকে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে ব্যক্তিগতভাবে যে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করা শুরু করেছেন সেটার কারণে হাসপাতালগুলো প্রয়োজনে অক্সিজেন পাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫