ঝালকাঠিতে করোনায় সাড়ে ৪ হাজার জেলের মানবেতর জীবন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ১৯:৫৩

ঝালকাঠি শহরের কোলঘেঁষে বয়ে চলেছে সুগন্ধা নদী। পুরো শহরকে ঘিরে রেখেছে শান্ত নদীটি। নদীবিধৌত উপকূলীয় এ জেলায় জেলে সম্প্রদায় সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন করে। ৩শ বছর কিংবা তারও বেশি প্রাচীন এ জনপদের গোড়াপত্তনের দাবিদার জেলেরা।
এককালের সন্ধ্যা নদীর শাখাই আজকের সুগন্ধা নদী। বর্তমান শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি গুরুধাম ও শশ্মানঘাট নদীসংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠে জেলেদের বসতি।
জানা যায়- এখানকার জেলেরা ‘ঝালো’ ও ‘মালো’ সম্প্রদায়ে বিভক্ত। সন্ধ্যার শাখা সুগন্ধা, বিষখালি, ধানসিঁড়িসহ সকাল-সন্ধ্যা কেটে যেত জেলেদের নৌকায় নৌকায়। নৌকা বোঝাই মাছ গঞ্জের হাটে বেচাকেনার পর চাল-ডাল ও গৃহস্থালি জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরত জেলেরা। সে সময় জেলেপাড়ায় নানা উৎসব-পার্বণ লেগে থাকতো ১২ মাস।
স্থানীয়রা জানায়, আজও জেলেপাড়ায় শাঁখের শব্দ বাজে। তবে এ শব্দে কান্নার নিদারুণ সুর ধ্বনিত হয়। মর্মস্পর্শী অনুভবে তা স্পষ্ট শোনা যায়। সুখ আর আনন্দে গাঁথা জেলেপাড়ায় সময়ের বিবর্তনে আজ চৈত্রের দাবদাহ। বর্ষা মৌসুম ছাড়া জেলেরা এখন মাছ দেখে না বললেই চলে। চরম দারিদ্রে নৌকা ও জাল সংগ্রহের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছে যুবকরা। তাই পেশা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন অনেকে।
৮-১০টি সম্প্রদায় এখনো পূর্বপুরুষের পেশা আঁকড়ে কোনোমতে টিকে আছে। জেলে বিপুল মালো (২০) বলেন, গাঙে মাছ ধরতে যাইতে পারি না। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে মহল্লা থেকেও বের হতে পারি না। আর আমরা সরকারি সাহায্যও পাই না। সামনে ইলিশের সময় তখন যদি সরকার সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা উঠায়ে নিতো। তাহলে গাঙে মাছ ধরতে পারতাম।
বৃদ্ধ জেলে নবদ্বীপ (৬০) বয়সের তুলনায় যেন আরো বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। নদীতে মাছ ধরেই শৈশব থেকে আজ বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। বছরের পর বছর রোদ, বৃষ্টি, শীত যেন শরীরের ওপর দিয়ে গেছে। তাই নানা রোগ-শোকে এখন বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
তিনি জানান, একসময় নদীতে মাছের অভাব ছিল না। এখন আর আগের মতো মাছ নেই। এর মধ্যে করোনার ছোবল। সরকারি সাহায্যও পাননি।
জেলে বরুণ মালো (৩২) অভিযোগ করে বলেন, এই করোনার সময়ে হুনছি অনেকে গরিব গো খাওন দেছে। মোগো তো কেউ কিছু দেলো না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, জেলায় মোট জেলের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩০ জন। আসলে জনসংখ্যা ও জেলের সংখ্যা বেড়েছে। আর ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা থেকেও ইলিশ ধরা পড়ে। বাকি কিছু সুগন্ধায় আসে।
তবে সাধ্যমতো জেলেদের সরকারি প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।