তিস্তার পানি ফের বিপদসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ১৪:৩৯
-5ef5b4290f128.jpg)
কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি ফের বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো জলকপাট। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুন রাত থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। পরে শুকবার (২৬ জুন) সকাল ৬টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে রেকর্ড করা হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে পানি কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই ছিলো। এতে বন্যার উন্নতি ঘটে, নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নেমে যায়। এর রেশ কাটতে না কাটতে আবারো উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমা অতিক্রম করে। ফলে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে চরা লের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলি জমি। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ এবং গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
তবে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শাখা ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢরে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানের ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর ফলে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা চরা লের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মাচাং বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী বাগদাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর একটু একটু করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু রাতে প্রচণ্ড গতিতে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তারা পনিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ছয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্দ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাড়তে থাকে। শুক্রবার (২৬ জুন) সকাল ৬টার দিকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিন ঘণ্টা পর ৯টার দিকে পানি কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিকেলের মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।