
বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশেও। সেই সাথে বাড়ছে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যাও, যাদের চিকিৎসায় প্রয়োজন আইসিইউ বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। অথচ লাখো রোগীর তুলনায় দেশের আইসিইউ শয্যা খুবই কম। ঘাটতি রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও।
তবে এমন সময় পর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যা খালি থাকার দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের। তারা বলছেন, দেশে ৩৭৯টি আইসিইউ আছে, এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮৩ জন এবং আইসিইউ বেড খালি রয়েছে ১৯৬টি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে একটি আইসিইউর জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে হয়রান হওয়ার খবর বিভিন্ন সময় প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সেই সঙ্গে কভিড হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সুবিধা না থাকার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ৫ শতাংশ রোগীর জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউ সুবিধা প্রস্তুত রাখা উচিত। সে হিসেবে বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে সাড়ে ৬ হাজার আইসিইউ শয্যা থাকার কথা। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে আছে মাত্র ৩৭৯টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ডেডিকেটেড আইসিইউ সারা দেশে প্রায় ৩৭৯টি। পাশাপাশি আরো বাড়ানোর কাজ করছি।
২৬ জুন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীসহ এ বিভাগের ২০টি নির্ধারিত কভিড হাসপাতালে ১৫টি আইসিইউ শয্যা। চট্টগ্রামের আটটি কভিড হাসপাতালে আইসিইউ আছে মাত্র চারটিতে। ময়মনসিংহ বিভাগে নেই একটিতেও। রাজশাহীতে মাত্র ২৩টি আইসিইইউ বেড, রংপুরে ২০টি, খুলনায় ১৮টি, বরিশালে ১০টি ও সিলেটে ১০টি আইসিইউ বেড।
এতো বিশাল ঘাটতির পরও আশ্চর্যজনকভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দাবি পর্যাপ্ত আইসিইউ থাকার। এমন অবস্থায় উদ্বেগ জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর অনুপাতে দেশে তীব্র সংকট রয়েছে আইসিইউ শয্যার। শুধু কভিড রোগী নয়, স্বাভাবিক রোগীদের জন্যও অপর্যাপ্ত আইসিইউ। তাই সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান তাদের।
ডা. বেনজির গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার পূর্বে যে আইসিইউয়ের চাহিদা সেটাই পূরণ করতে পারতো না। তাই করোনার সময়ে আইসিউয়ের চাহিদা পূরণ করা আসলেই কষ্টসাধ্য।
পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিশ্চিতের তাগিদও দিয়েছেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, এখন সময় আসছে, বাংলাদেশের যত স্বাস্থ্য কাঠামো আছে, যত আইসিইউ বেড আছে সবগুলোকে একটি সিঙ্গেল কমান্ডে নিয়ে আসেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশের ৮টি বিভাগের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে মাত্র ১০ হাজার ২২০টি। যা করোনা রোগীদের সংখ্যার তুলনায় ৮ শতাংশেরও কম।
শুক্রবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যে জানানো হয়, সারাদেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৬১০টি এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ৩৭৯টি। এরমধ্যে সাধারণ শয্যায় করোনা রোগী ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৬৯১ জন এবং ফাঁকা রয়েছে ৯ হাজার ৯১৯টি। এদিকে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮৩ জন এবং আইসিইউ বেড খালি রয়েছে ১৯৬টি।
ঢাকা মহানগরীতে করোনার জন্য হাসপাতাল রয়েছে ১৬টি এবং ঢাকা জেলায় একটি। ঢাকা মহানগরীতে করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭৩টি এবং আইসিইউ শয্যা ১৮০টি। সাধারণ শয্যায় ভর্তি আছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন এবং আইসিইউতে ভর্তি আছেন ৯৭ জন করোনা রোগী।
করোনার জন্য নির্ধারিত সব হাসপাতালেই রোগী ভর্তি হতে পারবেন। কারণ অনেক শয্যা খালি আছে। সব হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে মোট ১০ হাজার ২৪০টি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা ৮০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৫৫টি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন তথ্যে হতবাক হয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তারা মনে করেন করোনার সময়ে আইসিউয়ের চাহিদা পূরণ করা কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। যেখানে স্বাভাবিক সময় রোগীর অনুপাতে দেশে সংকট ছিলো আইসিইউ শয্যার।
এদিকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনে। আর আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৬৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।